লোকের সঙ্গে মেশা বা সভাস্থলে দুটো কথা বলা সেও তাঁহার দ্বারা হইয়া উঠে না। চোখে কম দেখেন বলিয়া চেনা লোককে চিনিতে পারেন না এবং সেই কারণেই ভ্রুকুঞ্চিত করিয়া দৃষ্টিপাত করিতে হয়, লোকে সেটাকে ঔদ্ধত্য বলিয়া বিবেচনা করে।
কলিকাতায় জনসমুদ্রের মধ্যে আপন মনে একলা থাকা শোভা পায় কিন্তু পল্লিগ্রামে সেটা বিশেষ স্পর্দ্ধার মত দেখিতে হয়। শশিভূষণের বাপ যখন বিস্তর চেষ্টায় পরাস্ত হইয়া অবশেষে তাঁহার অকর্ম্মণ্য পুত্রটিকে পল্লীতে তাঁহাদের সামান্য বিষয়রক্ষাকার্য্যে নিয়োগ করিলেন তখন শশিভূষণকে পল্লীবাসীদের নিকট হইতে বিস্তর উৎপীড়ন, উপহাস এবং লাঞ্ছনা সহিতে হইয়াছিল। লাঞ্ছনার আরও একটা কারণ ছিল; শান্তিপ্রিয় শশিভূষণ বিবাহ করিতে সন্মত ছিলেন না—কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতাগণ তাঁহার এই অনিচ্ছাকে দুঃসহ অহঙ্কার জ্ঞান করিয়া কিছুতেই ক্ষমা করিতে পারিতেন না।
শশিভূষণের উপর যতই উপদ্রব হইতে লাগিল শশিভূষণ ততই আপন বিবরের মধ্যে অদৃশ্য হইতে লাগিলেন। একটি কোণের ঘরে তক্তপোষের উপর কতকগুলি বাঁধানো ইংরাজি বই লইয়া বসিয়া থাকিতেন—যখন যেটা ইচ্ছা হইত পাঠ করিতেন, এই ত ছিল তাঁহার কাজ বিষয় কি করিয়া রক্ষা হইত তাহা বিষয়ই জানে।