বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কথা
১৩

প্রণমিয়া গুরুজনে,—সখীদলবলে
ভাসাইয়া বিদায়ের শোকঅশ্রুজলে।
ঘাটে আসি দেখে, সেথা আগেভাগে ছুটি
রাখাল বসিয়া আছে তরী পরে উঠি
নিশ্চিন্ত নীরবে। “তুই হেথা কেন ওরে।”
মা শুধাল,—সে কহিল, “যাইব সাগরে।”
“যাইবি সাগরে, আরে, ওরে দস্যু ছেলে।
নেমে আয়।”—পুনরায় দৃঢ় চক্ষু মেলে
সে কহিল দুটি কথা—“যাইব সাগরে।”
যত তার বাহু ধরি টানাটানি করে
রহিল সে তরণী আঁকড়ি। অবশেষে
ব্রাহ্মণ করুণ স্নেহে কহিলেন হেসে
“থাক্ থাক্‌ সঙ্গে যাক।” মা রাগিয়া বলে
“চল্ তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে।”
যেমনি সে কথা গেল আপনার কানে
অমনি মায়ের বক্ষ অনুতাপবাণে
বিঁধিয়া কঁদিয়া উঠে। মুদিয়া নয়ন
“নারায়ণ নারায়ণ” করিল স্মরণ।
পুত্রে নিল কোলে তুলি,—তার সর্বদেহে
করুণ কল্যাণ হস্ত বুলাইল স্নেহে।
মৈত্র তারে ডাকি ধীরে চুপি চুপি কয়
“ছি ছি ছি, এমন কথা বলিবার নয়।”