বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা ও কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৫

সভার লােকে সবে অন্যমনা,  কেহ বা কানাকানি করে।
কেহ বা তােলে হাই, কেহ বা ঢােলে,  কেহ বা চ'লে যায় ঘরে।
“ওরে রে আয় লয়ে তামাকু পান”  ভৃত্যে ডাকি কেহ কয়।
সঘনে পাখা নাড়ি কেহ বা বলে,  “গরম আজি অতিশয়।”
করিছে আনাগােনা ব্যস্ত লােক,  ক্ষণেক নাহি রহে চুপ।
নীরব ছিল সভা, ক্রমশ সেথা  শব্দ উঠে শতরূপ।

বুড়ার গান তাহে ডুবিয়া যায়  তুফান-মাঝে ক্ষীণ তরী-
কেবল দেখা যায় তানপুরায়  আঙুল কাঁপে থরথরি।
হৃদয়ে যেথা হতে গানের সুর  উছসি উঠে নিজসুখে
হেলার কলরব শিলার মতাে  চাপে সে উৎসের মুখে-
কোথায় গান আর কোথায় প্রাণ  দু দিকে ধায় দুই জনে,
তবুও রাখিবারে প্রভুর মান  বরজ গায় প্রাণপণে।

গানের এক পদ মনের ভ্রমে  হারায়ে গেল কী করিয়া,
আবার তাড়াতাড়ি ফিরিয়া গাহে-  লইতে চাহে শুধরিয়া।
আবার ভুলে যায়, পড়ে না মনে,  শরমে মস্তক নাড়ি
আবার শুরু হতে ধরিল গান—  আবার ভুলি দিল ছাড়ি।
দ্বিগুণ থরথরি কঁপিছে হাত,  স্মরণ করে গুরুদেবে।
কণ্ঠ কাঁপিতেছে কাতরে, যেন  বাতাসে দীপ নেবে-নেবে।
গানের পদ তবে ছাড়িয়া দিয়া  রাখিল সুরটুকু ধরি,
সহসা হাহারবে উঠিল কাঁদি  গাহিতে গিয়া হা-হা করি।