বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:কথা ও কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
কথা

হােক বিধাতার হাতে নিদারুণতর-
তােমা লাগি যা করেছি তুমি ক্ষমা করাে।”
চরণ কাড়িয়া লয়ে চাহি তার পানে
বসেন বলি উঠে, “আমার এ প্রাণে
তােমার কী কাজ ছিল। এ জন্মের লাগি
তাের পাপমূল্যে কেনা মহাপাপভাগী
এ জীবন করিলি ধিককৃত। কলঙ্কিনী,
ধিক্ এ নিশ্বাস মাের তাের কাছে ঋণী!
ধিক্ এ নিমেষপাত প্রত্যেক নিমেষে!”

এত বলি উঠিল সবলে। নিরুদ্দেশে
নৌকা ছাড়ি চলি গেলা তীরে, অন্ধকারে
বনমাঝে। শুষ্কপত্ররাশি পদভারে
শব্দ করি অরণ্যেরে করিল চকিত
প্রতি ক্ষণে। ঘন গুল্মগন্ধ পুঞ্জীকৃত
বায়ুশূন্য বনতলে; তরুকাণ্ডগুলি
চারি দিকে আঁকাবাঁকা নানা শাখা তুলি
অন্ধকারে ধরিয়াছে অসংখ্য আকার
বিকৃত বিরূপ। রুদ্ধ হল চারি ধার;
নিস্তব্ধনিষেধসম প্রসারিল কর
লতাশৃঙ্খলিত বন। শ্রান্ত কলেবর
পথিক বসিল ভূমে।