পাতা:কথা বনাম কাজ - প্রমথনাথ রায়চৌধুরী.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমরা যদি গোড়াতেই ইংরাজকে অবিশ্বাস করিয়া বসিতাম, ইংরাজের শাসনতন্ত্রকে পীড়নের যন্ত্রজ্ঞানে ঘৃণা করিতে শিখিতাম, তবে আমাদের সেই চেষ্টাকৃত অপরিণত বিতৃষ্ণার মধ্যে কাপট্য থাকিয়া যাইত; কিন্তু ধৈর্য্যশীল অভিজ্ঞতা আমাদিগকে এমন সুকঠিন বৰ্ম্মে আবৃত করিয়া দিয়াছে, যেখান হইতে রাজভক্তি বারবার বাধা পাইয়া ফিরিতেছে। । অপরপক্ষ বলেন,—রবীন্দ্রবাবুর দ্বিধা গঠনোন্মুখ সমাজে ‘ভাঙ্গন’ আনিয়াছে –এ অভিযোগ-অলুযোগের কোন হেতু নাই। রবীন্দ্রবাবু এমন কোন অদ্ভূত কথা বলেন নাই, কি অপূৰ্ব্ব পন্থা আবিষ্কার করেন নাই, যাহা প্রবীণ সমাজকে নবীনভাবে ভাঙ্গিতে গড়িতে পারে। রবীন্দ্রবাবুর তরফ হইতে হয় ত কথা উঠিবে,—ত হ’লে ত চুকিয়াই গেল ! —তবে বিরোধ ছিল কোথায়? মতভেদ দাড়াইয়াছিল কিসে? আসল কথা, দ্রুতসংশোধিত রবীন্দ্রনাথ সদলবলে এখন যে জায়গাটাতে আসিয়া র্তাবু গাড়িয়াছেন, সেখান হইতে বিপক্ষের সীমা-ব্যবধান হ্রস্ব হইয়া জাসিয়াছে। ছোট হোঁক্‌, বড় হোঁক্‌, ব্যবধান ত বটে। উহার ঔচিত্যকুচিত্য আৰপ্তকন্তু-অনাবশুকতার আলোচনা বাহুল্য নহে। আমরা রবীন্দ্রবাৰুর বিরাগ বা বিরোধকে আকস্মিক কি অনাহূত বলিতে পারি না। অৰ্দ্ধশতাব্দীর নৈরাশু দ্বারা উহা প্রবুদ্ধ ও প্রবৃদ্ধ। ইহাও অস্বীকার করিতে পারি না, স্বাধীন দেশের গৌরবোজ্জল আন্দোলনপ্রথার অক্ষম অনুকরণের দিকে এই পতিত জাতির একটা মারাত্মক ঝোক দাড়াইয়া গিয়াছিল। ডবল-প্রোমোশনপ্রাপ্ত ছাত্রের ন্তায় আমরা গোড়ায় কাচ থাকিয়া খুব চট্‌পট্‌ অগ্রসর হইতেছিলাম। ইহা নিনানীয়, সন্দেহ নাই; কিন্তু যে জাতি কেবল পায়ে ভর করা অভ্যাস করিতেছে, তাহার পক্ষে স্খলন-পতন আকস্মিক কি অভাবনীয় নহে। ক্রটি অনেককাল ধরা পড়িয়াছে, সঙ্গে সঙ্গে সংশোধনের উপায়ও উদ্ভাবিত হইতেছে। এই যে মুবাতাস বহিতেছে,