পাতা:কথা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
কথা

দ্বিতীয় রাত্রির শেষে খুলি বন্দীশালা
রমণী পশিল কক্ষে, হাতে দীপ জ্বালা’,
লােহার শৃঙ্খলে বাঁধা যেথা বজ্রসেন-
মৃত্যুর প্রভাত চেয়ে মৌনী জপিছেন
ইষ্টনাম। রমণীর কটাক্ষ-ইঙ্গিতে
রক্ষী আসি খুলি দিল শৃঙ্খল চকিতে।
বিস্ময়-বিহ্বল নেত্রে বন্দী নিরখিল
সেই শুভ্র সুকোমল কমল-উন্মীল
অপরূপ মুখ। কহিল গদগদ স্বরে -
“বিকারের বিভীষিকারজনীর পরে
করবৃত শুকতারা শুভ্রঊষাসম
কে তুমি উদিলে আসি কারাকক্ষে মম—
মুমূর্ষুর প্রাণরূপা, মুক্তিরূপা অয়ি
নিষ্ঠুর নগরী মাঝে লক্ষ্মী দয়াময়ী।”—
“আমি দয়াময়ী!” রমণীর উচ্চহাসে
চকিতে উঠিল জাগি নব ভয়ত্রাসে
ভয়ঙ্কর কারাগার। হাসিতে হাসিতে
উন্মত্ত উৎকট হাস্য শােকাশ্রুরাশিতে
শতধা পড়িল ভাঙি। কাঁদিয়া কহিলা—
এ পুরীর পথমাঝে যত আছে শিলা
কঠিন শ্যামার মত কেহ নাহি আর!-
এত বলি দৃঢ়বলে ধরি হস্ত তার
বজ্রসেনে লয়ে গেল কারার বাহিরে।
তখন জাগিছে উষা বরুণার তীরে,