পাতা:কথা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৩৯

ধিক্ এ নিমেষপাত প্রত্যেক নিমেষে!
এত বলি উঠিল সবলে। নিরুদ্দেশে
নৌকা ছাড়ি চলি গেলা তীরে—অন্ধকারে
বনমাঝে। শুষ্কপত্ররাশি পদভারে
শব্দ করি বনানীরে করিল চকিত
প্রতিক্ষণে; ঘন গুল্মগন্ধ পুঞ্জীকৃত
বায়ুশূন্য বনতলে; তরুকাণ্ডগুলি
চারিদিকে আঁকাবাঁকা নানা শাখা তুলি
অন্ধকারে ধরিয়াছে অসংখ্য আকার
বিকৃত বিরূপ; রুদ্ধ হল চারিধার;
নিস্তব্ধ নিষেধসম প্রসারিল কর
লতশৃঙ্খলিত বন। শ্রান্তকলেবর
পথিক বসিল ভূমে। কে তার পশ্চাতে
দাঁড়াইল উপছায়াসম! সাথে সাথে
অন্ধকারে পদে পদে তারে অনুসরি
আসিয়াছে দীর্ঘ পথ মৌনী অনুচরী
রক্তসিক্ত পদে। দুই মুষ্টি বন্ধ করে'
গর্জ্জিল পথিক —“তবু ছাড়িবি না মােরে!”
রমণী বিদ্যুৎবেগে ছুটিয়া পড়িয়া
বন্যার তরঙ্গসম দিল আবরিয়া
আলিঙ্গনে কেশপাশে স্রস্ত বেশবাসে
আঘ্রাণে চুম্বনে স্পর্শে সঘন নিশ্বাসে
সর্ব্ব অঙ্গ তার; আর্দ্র গদগদ-বচনা
কণ্ঠরুদ্ধপ্রায়;—ছাড়িব না ছাড়িব না