পাতা:কথা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৪৭

কহিল, মায়ের ডাক ওই শুনা যায়—
ও মাের দুঃখীর ধন, পেয়েছি উপায়—
তাের মার কোল চেয়ে সুশীতল কোল
আছে ওরে বাছা!-জাগিয়াছে কলরােল
অদূরে জাহ্নবীজলে,—এসেছে জোয়ার
পূর্ণিমায়। শিশুর তাপিত দেহভার
বক্ষে লয়ে মাতা গেল শূন্য ঘাটপানে।
কহিল, না, মার ব্যথা যদি বাজে প্রাণে
তবে এ শিশুর তাপ দেগে মা জুড়ায়ে।
একমাত্র ধন মাের দিমু তাের পায়ে
একমনে।—এত বলি সমর্পিল জলে।
অচেতন শিশুটিরে লয়ে করতলে,
চক্ষু মুদি। বহুক্ষণ আঁখি মেলিল না।
ধ্যানে নিরখিল বসি, মকরবাহনা
জ্যোতির্ম্ময়ী মাতৃমূর্ত্তি ক্ষুদ্র শিশুটিরে
কোলে করে এসেছেন, রাখি তার শিরে
একটি পদ্মের দল; হাসিমুখে ছেলে
অনিন্দিত কান্তি ধরি, দেবীকোল ফেলে
মার কোলে আসিবারে বাড়ায়েছে কর।
কহে দেবী -রে দুঃখিনী এই তুই ধর
তাের ধন তাের দিনু।—রােমাঞ্চিতকায়
নয়ন মেলিয়া কহে—“কই মা!—কোথায়!”
পরিপূর্ণ চন্দ্রালােকে বিহ্বলা রজনী;
গঙ্গা বহি চলি যায় করি কলধ্বনি।