পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজনিকেতনে।
৯৭

গ্রহণ করিলেন না। এক্ষণে জাঁহাপনার প্রসাদ ত্যাগ করিতে পারিবেন না।”

 বাদশাহ রহস্যে হাস্য করিয়া পরে গম্ভীর হইলেন।

 কহিলেন, “প্রেয়সি! তোমাকে আমার অদেয় কিছুই নাই। তোমার যদি সেই প্রবৃত্তি হয়, তবে তদ্রূপই কর। কিন্তু আমাকে কেন ত্যাগ করিয়া যাইবে? এক আকাশে কি চন্দ্র সূর্য্য উভয়েই বিরাজ করেন না? এক বৃন্তে কি দুটী ফুল ফুটে না?”

 লুৎফ্-উন্নিসা বিস্ফারিত চক্ষে বাদশাহের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “ক্ষুদ্র ফুল ফুটিয়া থাকে, কিন্তু এক মৃণালে দুইটি কমল ফুটে না। আপনার রত্নসিংহাসনতলে কেন কণ্টক হইয়া থাকিব?

 লুৎফ্-উন্নিসা আত্মমন্দিরে প্রস্থান করিলেন। তাঁহার এইরূপ মনোবাঞ্ছা যে কেন জন্মিল তাহা তিনি জাঁহাগীরের নিকট ব্যক্ত করেন নাই। অনুভবে যেরূপ বুঝা যাইতে পারে জাহাগীর সেইরূপ বুঝিয়া ক্ষান্ত হইলেন। নিগূঢ় তত্ত্ব কিছুই জানিলেন না। লুৎফ্-উন্নিসার হৃদয় পাষাণ। সেলিমের রমণীহৃদয়জিৎ রাজকান্তিও কখন তাঁহার মনঃ মুগ্ধ করে নাই। কিন্তু এই বার পাষাণমধ্যে কীট প্রবেশ করিয়াছিল।