পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
কপালকুণ্ডলা।

লেন; সেই অমল নীলানন্ত গগণরূপী সমুদ্র মনে পড়িল। কপালকুণ্ডলা পূর্ব্বস্মৃতি সমালোচনায় অন্যমনা হইয়া চলিলেন।

 অন্য মনে যাইতে যাইতে কোথায় কি উদ্দেশে যাইতেছিলেন, কপালকুণ্ডলা তাহা ভাবিলেন না। যে পথে যাইতেছিলেন, তাহা ক্রমে অগম্য হইয়া আসিল; বন নিবিড়তর হইল; শিরোপরে ব্রক্ষশাখাবিন্যাসে চন্দ্রলোক প্রায় একেবারে ৰুদ্ধ হইয়া আসিল, ক্রমে আর পথ দেখা যায় না। পথের অলক্ষ্যতায় প্রথমে কপালকুণ্ডলা চিন্তামগ্নতা হইতে উত্থিত হইলেন। ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলেন এই নিবিড় বনমধ্যে আলো জ্বলিতেছে। লুৎফ্-উন্নিসাও পূর্ব্বে এই আলো দেখিয়াছিলেন। কপালকুণ্ডলা পূর্ব্বাভ্যাসফলে এ সকল সময়ে ভয়হীনা, অথচ কৌতূহলময়ী। ধীরে ধীরে সেই দীপজ্যোতিরভিমুখে গেলেন। দেখিলেন, যথায় আলো জ্বলিতেছে তথার কেহ নাই। কিন্তু তাহার অনতিদূরে বননিবিড়তা হেতু দূর হইতে অদৃশ্য একটি ভগ্ন গৃহ আছে। গৃহটি ইষ্টকনির্মিত, কিন্তু অতি ক্ষুদ্র, অতি সামান্য; তাহাতে একটি মাত্র ঘর। সেই ঘর হইতে মনুষ্যকথোপকথন নির্গত হইতেছিল, কপালকুণ্ডলা নিঃশব্দ পদক্ষেপে গৃহ সন্নিধানে গেলেন। গৃহের নিকটবর্ত্তী হইবামাত্র বোধ হইল দুই জন মনুষ্য সাবধানে কথোপকথন করিতেছে। প্রথমে কথোপকথন কিছুই বুঝিতে পারিলেন না; পরে ক্রমে চেষ্টাজনিত