পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপকূলে।

শাভিমুখে যাত্রা করিতে পারিবেন। আরোহীবর্গেও এই পরামর্শে সম্মতি দিলেন। তখন নাবিকেরা তরী তীরলগ্ন করিলে আরোহীগণ অবতরণ করিয়া স্নানাদি প্রাতঃকৃত্য সম্পাদনে প্রবৃত্ত হইলেন।

 স্নানাদির পর পাকের উদ্‍যোগে আর এক নূতন বিপত্তি উপস্থিত হইল,—নৌকায় পাকের কাষ্ঠ নাই। ব্যাঘ্রভয়ে উপর হইতে কাষ্ঠ সংগ্রহ করিয়া আনিতে কেহই স্বীকৃত হইল না। পরিশেষে সকলের উপবাসের উপক্রম দেখিয়া প্রাচীন প্রাগুক্ত যুবাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “বাপু নবকুমার! তুমি ইহার উপায় না করিলে আমরা এত গুলিন লোক মারা যাই।”

 নবকুমার কিঞ্চিৎ কাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, “আচ্ছা, আমিই যাব; কুড়ালি দাও, আর দা লইয়া এক জন আমার সঙ্গে আইস।”

 কেহই নবকুমারের সহিত যাইতে চাহিল না।

 “খাবার সময় বুঝা যাবে” এই বলিয়া নবকুমার কঙ্কাল বন্ধন পূর্ব্বক একক কুঠার হস্তে কাষ্ঠাহরণে চলিলেন।

 তীরোপরি আরোহণ করিয়া নবকুমার দেখিলেন যে, যতদূর দৃষ্টি চলে তত দূর মধ্যে কোথাও বসতির লক্ষণ কিছুই নাই। কেবল বন মাত্র। কিন্তু সে বন, দীর্ঘ বৃক্ষবলিশোভিত বা নিবিড় বন নহে;—কেবল স্থানে স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিজ্জ মণ্ডলাকারে কোন কোন ভূমিখণ্ড ব্যাপিয়াছে। নবকুমার তন্মধ্যে আহরণযোগ্য কাষ্ঠ দেখিতে পাইলেন না; সুতরাং উপযুক্ত বৃক্ষের অনুসন্ধানে নদী-