পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
কপালকুণ্ডলা।

করিলেন; জ্বলন্ত বহ্নিশিখায় পতনোন্মুখ পতঙ্গের ন্যায় সিদ্ধান্ত করিলেন।

 সন্ধ্যার পরে গৃহকর্ম্ম কতক কতক সমাপন করিয়া কপালকুণ্ডলা পূর্ব্বমত বনাভিমুখে যাত্রা করিলেন। কপালকুণ্ডলা যাত্রাকালে শয়নাগারে প্রদীপটী উজ্জ্বল করিয়া গেলেন। তিনি যেমন কক্ষ্যা হইতে বাহির হইলেন, অমনি গৃহের প্রদীপ নিবিয়া গেল।

 যাত্রা কালে কপালকুণ্ডলার এক কথা বিস্মৃত হইলেন। ব্রাহ্মণবেশী কোন স্থানে সাক্ষাৎ করিতে লিখিয়া ছিলেন? এই জন্য লিপি পুনর্ব্বার পাঠের আবশ্যক হইল। গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন করিয়া যে স্থানে প্রাতে লিপি রাখিয়া ছিলেন, সে স্থানে অন্বেষণ করিলেন, সে স্থানে লিপি পাইলেন না। স্মরণ হইল যে কেশবন্ধন সময়ে, ঐ লিপি সঙ্গে সঙ্গে রাখিবার জন্য, কবরী মধ্যে বিন্যস্ত করিয়াছিলেন। অতএব কবরী মধ্যে অঙ্গুলি দিয়া সন্ধান করিলেন। অঙ্গুলিতে লিপি স্পর্শ না হওয়াতে কবরী আলুলায়িত করিলেন, তথাপি সে লিপি পাইলেন না। তখন গৃহের অন্যান্য স্থানে তত্ত্ব করিলেন। কোথাও না পাইয়া, পরিশেষে পূর্ব্ব সাক্ষাৎ স্থানেই সাক্ষাৎ সম্ভব সিদ্ধান্ত করিয়া পুনর্যাত্রা করিলেন। অনবকাশ প্রযুক্ত সে বিশাল কেশরাশি পুনর্বিন্যস্ত করিতে পারেন নাই, অতএব আজি কপালকুণ্ডলা অনূঢ়া কালের মত কেশমণ্ডলমধ্যবর্ত্তিনী হইয়া চলিলেন।