পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
কপালকুণ্ডলা।

ক্রমে কাষ্ঠরাশি জ্বলিতে আরম্ভ হইলে প্রথমে নিম্ন হইতে সর্পজিহ্বার ন্যায় দুই একটি শিখা আসিয়া অঙ্গের স্থানে স্থানে দংশন করে, পরে সশব্দে অগ্নিজ্বালা চতুর্দ্দিক্ হইতে আসিয়া বেষ্টন করিয়া অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যাপিতে থাকে; শেষে প্রচণ্ড রবে অগ্নিরাশি গগনমণ্ডল জ্বালাময় করিয়া মস্তক অতিক্রম পূর্ব্বক ভস্মরাশি করিয়া ফেলে।

 নবকুমারের লিপি পাঠ করিয়া সেইরূপ হইল। প্রথমে বুঝতে পারিলেন না; পরে সংশয়, পরে নিশ্চয়তা, শেষে জ্বালা। মনুষ্যহৃদয় ক্লেশাধিক্য বা সুখাধিক্য একেবারে গ্রহণ করিতে পারে না, ক্রমে ক্রমে গ্রহণ করে। নবকুমারকে প্রথমে ধূমরাশি বেষ্টন করিল; পরে বহ্নিশিখা হৃদয় তাপিত করিতে লাগিল; শেষে বহ্নিরাশিতে হৃদয় ভস্মীভূত হইতে লাগিল। ইতিপূর্ব্বেই নবকুমার দেখিয়াছিলেন যে কপালকুণ্ডলা কোন কোন বিষয়ে তাঁহার অবাধ্য হইয়াছেন। বিশেষ কপালকুণ্ডলা তাঁহার নিষেধ সত্ত্বেও যখন যেখানে সেখানে একাকিনী যাইতেন; যাহার তাহার সহিত যথেচ্ছা আচরণ করিতেন; অধিকন্তু তাঁহার বাক্য হেলন করিয়া নিশীথে একাকিনী বনভ্রমণ করিতেন। আর কেহ ইহাতে সন্দিহান হইত, কিন্তু নবকুমারের হৃদয়ে কপালকুণ্ডলার প্রতি সন্দেহ উত্থাপিত হইলে চিরানিবার্য্য বৃশ্চিক দংশনবৎ হইবে জানিয়া, তিনি এক দিনের তরে সন্দেহকে স্থান দান করেন নাই। অদ্য সন্দেহকে স্থান দিতেন না, কিন্তু অদ্য সন্দেহ নহে; প্রতীতি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে।