পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
কপালকুণ্ডলা।

আমি এখন বুঝিতে পারিতেছি না। অট্টালিকা, ধন সম্পত্তি, দাস দাসীরও প্রয়োজন নাই। আমি তোমার সুখের পথ কেন রোধ করিব? তোমার মানস সিদ্ধ হউক—কালি হইতে বিঘ্নকারিণীর কোন সম্বাদ পাইবে না। আমি বনচর ছিলাম আবার বনচর হইব?”

 লুৎফ-উন্নিসা চমৎকৃতা হইলেন, এরূপ আশু স্বীকারের কোন প্রত্যাশা করেন নাই। মোহিত হইয়া কহিলেন, “ভগিনি—তুমি চিরায়ুষ্মতী হও! আমার জীবন দান করিলে। কিন্তু আমি তোমাকে অনাথিনী হইয়া যাইতে দিব না। কল্য প্রাতে তোমার নিকট আমার এক জন বিশ্বাসযোগ্যা চতুরা দাসী পাঠাইব। তাহার সঙ্গে যাইও। বৰ্দ্ধমানে কোন অতি প্রধানা স্ত্রীলোক আমার সুহৃৎ।—তিনি তোমার সকল প্রয়োজন সিদ্ধ করিবেন।”

 লুৎফ-উন্নিসা এবং কপালকুণ্ডলা এরূপে মনঃসংযোগ করিয়া কথাবার্ত্তা কহিতেছিলেন, যে সম্মুখ বিঘ্ন কিছুই দেখিতে পারেন নাই। যে বন্য পথ তাঁহাদিগের আশ্রয়স্থান হইতে বাহির হইয়াছিল, সে পথপ্রান্তে দাঁড়াইয়া কাপালিক ও নবকুমার তাঁহাদিগের প্রতি যে করাল দৃষ্টিপাত করিতেছিলেন, তাহা কিছুই দেখিতে পারেন নাই।

 নবকুমার ও কাপালিক ইঁহাদিগের প্রতি দৃষ্টি করিয়াছিলেন মাত্র, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তত দূর হইতে তাহাদিগের কথোপকথনের মধ্য কিছুই তদুভয়ের শ্রুতিগোচর হইল না। মনুষ্যের চক্ষুঃ কর্ণ যদি সমদূরগামী