পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গৃহাভিমুখে।
১৫৩

না। সংসারের অন্য কোন বন্ধন না থাকিলেও পঞ্চ ভূতের এক বন্ধন আছে।

 কপালকুণ্ডলা অধোবদনে চলিতে লাগিলেন। যখন মনুষ্যহৃদয় কোন উৎকট ভাবে আচ্ছন্ন হয়, চিন্তার একাগ্রতায় বাহ্যসৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য থাকে না, তখন অনৈসর্গিক পদার্থও প্রত্যক্ষীভূত বলিয়া বোধ হয়। কপালকুণ্ডলার সেই অবস্থা হইয়াছিল। যেন ঊর্দ্ধ হইতে তাঁহার কর্ণকুহরে এই শব্দ প্রবেশ করিল, “বৎসে—আমি পথ দেখাইতেছি।” কপালকুণ্ডলা চকিতের ন্যায় ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিলেন। দেখিলেন যেন আকাশমণ্ডলে নবনীরদনিন্দিত মূর্ত্তি! গলবিলম্বিতনরকপালমালা হইতে শোণিতশ্রুতি হইতেছে; কটিমণ্ডল বেড়িয়া নরকররাজি দুলিতেছে—বাম করে নরকপাল—অঙ্গে ৰুধির ধারা, ললাটে বিষমোজ্জ্বলজ্বালাবিভাসিত লোচন প্রান্তে বালশশী সুশোভিত! যেন ভৈরবী দক্ষিণ হস্ত উত্তোলন করিয়া কপালকুণ্ডলাকে ডাকিতেছেন।

 কপালকুণ্ডলা ঊর্দ্ধমুখী হইয়া চলিলেন। সেই নবকাদম্বিনীসন্নিভ রূপ আকাশমার্গে তাঁহার আগে আগে চলিল। কখন কপালমালিনীর অবয়ব মেঘে লুক্কায়িত হয়, কখন নয়নপথে স্পষ্ট বিকশিত হয়। কপালকুণ্ডলা তাঁহার প্রতি চাহিয়া চলিলেন।

 নবকুমার বা কাপালিক এ সব কিছুই দেখে নাই। নবকুমার সুরাগরলপ্রজ্বলিতহৃদয়—কপালকুণ্ডলার ধীর পদক্ষেপ অসহিষ্ণু হইয়া সঙ্গীকে কহিলেন,