পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাপালিকসঙ্গে।
২৭

বঞ্চিত ছিলাম?” কাপালিক কহিল, “নিজব্রতে নিযুক্ত ছিলাম।”

 নবকুমার গৃহ গমনাভিলাষ ব্যক্ত করিলেন। কহিলেন “পথ অবগত নহি—পাথেয় নাই; যদ্বিহিত বিধান প্রভুর সাক্ষাৎ লাভ হইলে হইতে পারিবে এই ভরসায় আছি।”

 কাপালিক কেবল মাত্র কহিল “আমার সঙ্গে আগমন কর।” এই বলিয়া উদাসীন গাত্রোত্থান করিলেন। বাটী যাইবার কোন সদুপায় হইতে পারিবেক প্রত্যাশায় নবকুমারও তাহার পশ্চাদ্বর্ত্তী হইলেন।

 তখনও সন্ধ্যালোক অন্তর্হিত হয় নাই—কাপালিক অগ্রে অগ্রে, নবকুমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতেছিলেন। অকস্মাৎ নবকুমারের পৃষ্ঠদেশে কাহার কোমল করস্পর্শ হইল। পশ্চাৎ ফিরিয়া যাহা দেখিলেন তাহাতে স্পন্দহীন হইলেন। সেই আগুল্‌ফলম্বিত-নিবিড়কেশরাশি-ধারিণী বন্যদেবীমূর্ত্তি! পূর্ব্ববৎ নিঃশব্দ; নিস্পন্দ। কোথা হইতে এ মূর্ত্তি অকস্মাৎ তাঁহার পশ্চাতে আসিল? নবকুমার দেখিলেন, রমণী মুখে অঙ্গুলি প্রদান করিয়াছে। নবকুমার বুঝিলেন যে রমণী বাক্যস্ফূর্ত্তি নিষেধ করিতেছে। নিষেধের বড় প্রয়োজনও ছিল না। নবকুমার কি কথা কহিবেন? তিনি তথায় চমৎকৃত হইয়া দাঁড়াইলেন। কাপালিক এ সকল কিছুই দেখিতে পাইল না, অগ্রসর হইয়া চলিয়া গেল। তাঁহারা উদাসীনের শ্রবণাতিক্রান্ত হইলে রমণী মৃদুস্বরে কি কথা কহিল। নবকুমারের কর্ণে এই শব্দ প্রবেশ করিল,