পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
কপালকুণ্ডলা।

 “কোথা যাইতেছ? যাইও না। ফিরিয়া যাও—পলায়ন কর।”

 এই কথা সমাপ্ত করিয়াই উক্তিকারিণী সরিয়া গেলেন, প্রত্যুত্তর শুনিবার জন্য তিষ্ঠিলেন না। নবকুমার কিয়ৎকাল অভিভূতের ন্যায় দাঁড়াইলেন; পশ্চাদ্বর্ত্তী হইতে ব্যগ্র হইলেন, কিন্তু রমণী কোন্ দিকে গেল তাহার কিছুই স্থিরতা পাইলেন না। মনে করিতে লাগিলেন—“এ কাহারও মায়া? না আমারই ভ্রম হইতেছে? যে কথা শুনিলাম—সেত আশঙ্কাসূচক; কিন্তু কিসের আশঙ্কা? তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে। তবে কি পলাইব? কোথায় পলাইবার স্থান আছে?”

 নবকুমার এই রূপ চিন্তা করিতেছিলেন, এমত সময়ে দেখিলেন কাপালিক তাঁহাকে সঙ্গে না দেখিয়া প্রত্যাবর্ত্তন করিতেছে। কাপালিক কহিল, “বিলম্ব করিতেছ কেন?”

 যখন লোকে ইতিকর্ত্তব্য স্থির না করিতে পারে, তখন তাহাদিগকে যে দিকে প্রথম আহূত করা যায়, সেই দিকেই প্রবৃত্ত হয়। কাপালিক পুনরাহ্বান করাতে বিনা বাক্য ব্যয়ে নবকুমার তাঁহার পশ্চাদ্বর্ত্তী হইলেন।

 কিয়দ্দূর গমন করিয়া সম্মুখে এক মৃৎপ্রাচীরবিশিষ্ট কুটীর দেখিতে পাইলেন। তাহাকে কুটীরও বলা যাইতে পারে, ক্ষুদ্র গৃহও বলা যাইতে পারে। কিন্তু ইহাতে আমাদিগের কোন প্রয়োজন নাই। ইহার পশ্চাতেই সিকতাময় সমুদ্রতীর। গৃহপার্শ্ব দিয়া কাপালিক নবকুমারকে সেই সৈকতে লইয়া চলিলেন; এমত সময়ে তীরের তুল্য