পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুন্দরী সন্দর্শনে।
৬১

দেখিলেন, এবার আবার রূপান্তর। মতিবিধি, পূর্ব্ব পরিচ্ছদ ত্যাগ করিয়া সুবর্ণমুক্তাদিশোভিত কাৰুকার্য্যযুক্ত বেশ ভূষা ধারণ করিয়াছেন;—নিরলঙ্কার দেহ অলঙ্কারে খচিত করিয়াছেন। যেখানে যাহা ধরে—কুন্তলে, কবরীতে, কপালে, নয়নপার্শ্বে, কর্ণে, কণ্ঠে, হৃদয়ে, বাহুযুগে, সর্ব্বত্রে সুবর্ণ মধ্য হইতে হীরকাদি রত্ন ঝলসিতেছে। নবকুমারের চক্ষু অস্থির হইল। অধিকাংশ স্ত্রীলোক বহুস্বর্ণখচিত হইলে প্রায় কিছু শ্রীহীনা হয়;—অনেকেই সজ্জিতা পুত্তলিকার দশা প্রাপ্ত হয়েন; —কিন্তু মতি বিবিতে সে শ্রীহীনতা বা দশা দৃষ্ট হইবার সম্ভাবনা ছিল না। প্রভূতনক্ষত্রমালাভূষিত আকাশের ন্যায়—মধুরায়ত শরীর সহিত অলঙ্কার বাহুল্য সুসঙ্গত বোধ হইল বরং তাহাতে আরও সৌন্দর্য্যপ্রভা বর্দ্ধিত হইল। মতি বিবি নবকুমারকে কহিলেন, “মহাশয়, চলুন, আপনার পত্নীর নিকট পরিচিত হইয়া আসি।”

 এই কথা মতিবিধি পূর্ব্ববৎ ব্যঙ্গানুরাগের সহিত কহিলেন, কিন্তু নবকুমার শুনিলেন তাহার কণ্ঠের স্বর কিছু বিকৃত। নবকুমার মতিবিবিকে সঙ্গে করিয়া লইয়া চলিলেন। যে দাসী শিবিকারোহণে আসিয়াছিল, সেও সঙ্গে চলিল। ইহার নাম পেষ্‌মন্।

 কপালকুণ্ডলা দোকান ঘরের আর্দ্র মৃত্তিকায় একাকিনী বসিয়াছিলেন। একটী ক্ষীণালোক প্রদীপ জ্বলিতেছে মাত্র—অবদ্ধনিবিড়কেশরাশি পশ্চাদ্ভাগ অন্ধকার করিয়া রহিয়াছিল। মতিবিবি প্রথম যখন তাঁহাকে দেখিলেন,