পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবরোধে।
৬৯

ছিল। ইহার প্রধান কারণ এই যে, তন্নগরীর প্রান্তভাগ প্রক্ষালিত করিয়া যে স্রোতস্বতী বাহিত হইত, এক্ষণে তাহা শঙ্কীর্ণশরীরা হইয়া আসিতে ছিল; সুতরাং বৃহদাকার জলযান সকল আর নগরী পর্য্যন্ত আসিতে পারিত না। একারণ বাণিজ্য বাহুল্য ক্রমে লুপ্ত হইতে লাগিল। বাণিজ্যগৌরবা নগরীর বাণিজ্য নাশ হইলে সকলই যায়। সপ্তগ্রামের সকলই গেল। একাদশ শতাব্দীতে হুগলী নূতন সৌষ্ঠবে তাহার প্রতিযোগী হইয়া উঠিতেছিল। তথায় পর্ত্তুগীসেরা বাণিজ্য আরম্ভ করিয়া সপ্তগ্রামের ধনলক্ষ্মীকে আকর্ষিতা করিতেছিলেন। কিন্তু তখনও সপ্তগ্রাম একেবারে হতশ্রী হয় নাই। তথায় এপর্য্যন্ত ফৌজদার প্রভৃতি প্রধান রাজপুৰুষদিগের বাস ছিল; কিন্তু নগরীর অনেকাংশ শ্রীভ্রষ্ট এবং বসতিহীন হইয়া পল্লীগ্রামের আকার ধারণ করিয়াছিল।

 সপ্তগ্রামের, এক নির্জ্জন ঔপনগরিক ভাগে নবকুমারের বাস। এক্ষণে সপ্ত গ্রামের ভগ্নদশায় তথায় প্রায় মনুষ্য সমাগম ছিল না; রাজপথ সকল লতাগুল্মাদিতে পরিপূরিত হইয়াছিল। নবকুমারের বাটীর পশ্চাদ্ভাগেই এক বিস্তৃত নিবিড় বন। বাটীর সম্মুখে প্রায় ক্রোশার্দ্ধ দূরে একটী ক্ষুদ্র খাল বহিত; সেই খাল একটা ক্ষুদ্র প্রান্তর বেষ্টন করিয়া গৃহের পশ্চাদ্ভাগস্থ বনমধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। গৃহটী ইষ্টক রচিত; দেশকাল বিবেচনা করিলে তাহাকে নিতান্ত সামান্য গৃহ বলা যাইতে পারিত না। দোতালা বটে, কিন্তু