পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
কপালকুণ্ডলা।

তবে কখন কখন ছদ্মবেশে দেশবিদেশ ভ্রমণ কালে ঐ নাম গ্রহণ করিতেন। ইহার পিতা ঢাকায় আসিয়া রাজকার্য্যে নিযুক্ত হইলেন। কিন্তু তথায় অনেক নিজ দেশীয় লোকের সমাগম। দেশীয় সমাজে সমাজচ্যুত হইয়া সকলের থাকিতে ভাল লাগে না। অতএব তিনি কিছুদিনে সুবাদারের নিকট প্রতিপত্তি লাভ করিয়া তাঁহার সুহৃৎ অনেকানেক ওমরাহের নিকট পত্র সংগ্রহপূর্ব্বক সপরিবারে আগ্রা আসিলেন। আকবরশাহের নিকট কাহারও গুণ অবিদিত থাকিত না; শীঘ্রই তিনি ইহার গুণগ্রহণ করিলেন। লুৎফ্-উন্নিসার পিতা শীঘ্রই উচ্চপদস্থ হইয়া আগ্রার প্রধান ওমরাহ মধ্যে গণ্য হইলেন। এদিকে লুৎফ্-উন্নিসা ক্রমে বয়ঃপ্রাপ্ত হইতে লাগিলেন। আগ্রাতে আসিয়া তিনি পারসীক, সংস্কৃত, নৃত্য, গীত, রসবাদ ইত্যাদিতে সুশিক্ষিতা হইলেন। রাজধানীর অসংখ্য রূপবতী-গুণবতী দিগের মধ্যে অর্থগণ্যা হইতে লাগিলেন। দুর্ভাগ্য বশতঃ বিদ্যাসম্বন্ধে তাঁহার ঈদৃশ শিক্ষা হইয়াছিল, নীতিসম্বন্ধে তাহার কিছুই হয় নাই। লুৎফ্-উন্নিসার বয়স পূর্ণ হইলে প্রকাশ পাইতে লাগিল যে, তাঁহার মনোবৃত্তি সকল দুর্দ্দমবেগবতী। ইন্দ্রিয়দমনের কিছুমাত্র ক্ষমতাও নাই, ইচ্ছাও নাই। সদসতে সমান প্রবৃত্তি। একার্য্য সৎ, একার্য্য অসৎ এমত বিচার করিয়া তিনি কোন কর্ম্মে প্রবৃত্ত হই তেন না; যাহা ভাল লাগিত, তাহাই করিতেন। যখন সৎকর্ম্মে অন্তঃকরণ সুখী হইত, তখন সৎকর্ম্ম করিতেন;