পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
কপালকুণ্ডলা।

সিংহাসনারূঢ় হইয়াছেন। দিল্লীশ্বরের দমন করিবে?”

 মেহের-উন্নিসা আর কিছু শুনিলেন না। তাঁহার সর্ব্বাঙ্গ শিহরিয়া কাঁপিতে লাগিল। আবার মুখ নত করিলেন—লোচনযুগলে অশ্রুধারা বহিতে লাগিল। মতি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাঁদ কেন?”

 মেহের-উন্নিসা নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন “সেলিম ভারতবর্ষের সিংহাসনে, আমি কোথায়?”

 মতির মনস্কাম সিদ্ধ হইল। তিনি কহিলেন, “তুমি কি আজও যুবরাজকে একেবারে বিস্মৃত হইতে পার নাই?”

 মেহের-উন্নিসা গদ গদ স্বরে কহিলেন “কাহাকে বিস্মৃত হইব? আত্মজীবন বিস্মৃত হইব, তথাপি যুবরাজকে বিস্মৃত হইতে পারিব না। কিন্তু শুন ভগিনি—অকস্মাৎ মনের কবাট খুলিল; তুমি এ কথা শুনিলে; কিন্তু আমার শপথ, একথা যেন কর্ণান্তরে না যায়।”

 মতি কহিল, “ভাল তাহাই হইবে। কিন্তু যখন সেলিম শুনিবেন যে আমি বর্দ্ধমানে আসিয়াছিলাম, তখন তিনি অবশ্য জিজ্ঞাসা করিবেন যে মেহের-উন্নিসা আমার কথা কি বলিল? তখন আমি কি উত্তর করিব?”

 মেহের-উন্নিসা কিছু ক্ষণ ভাবিয়া কহিলেন “এই কহিও যে মেহের-উন্নিসা হৃদয়মধ্যে তাঁহার ধ্যান করিবে। প্রয়োজন হইলে তাঁহার জন্য আত্মপ্রাণ পর্যন্ত সমর্পণ করিবে। কিন্তু কখন আপন কুলমান সমর্পণ করিবে না।