পাতা:কবিতাসংগ্রহ ১ - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যখন গন্তব্য নেই, পথের সন্ত্রাসে হারিয়ে গিয়েছে পথিকেরা
এল সেই কৃষ্ণপক্ষ, সেই ছিন্নমস্তা কাল
শূন্যের ভেতরে খাড়া হয়ে উঠছে আরো বেআব্রু শূন্যতা, শূন্য থেকে
শূন্য তুলে নিই তবু রক্তবীজ শূন্যের তরঙ্গ
ঝাপিয়ে পড়েছে আর উপড়ে নিচ্ছে সময়ের শিকড়-বাকড়
এখন গন্তব্য নেই, এখন যাত্রাও নেই কোনো
শুধু হিম শূন্যতায় হারানো পথের ভাষ্য লিখে-যাওয়া
যখন সময় বিষে নীল আর উম্মাননা শেকড় থেকে খসে পড়ছে।
মাটির বিষাদ, এল সেই কৃষ্ণপক্ষ

এই অন্ধকার ছিল না যখন মানুষেরা পায়ে-পায়ে এগিয়ে গিয়েছে।
দ্রাবিড়-নিষাদ আর কিরাতের দল
মিশে গেছে শক-হুন-যবনের স্কন্ধাবারে, গান্ধারে-কোশলে
কত স্থাপত্য-সঙ্গীতে মূৰ্ছনা উঠেছে বারবার
রক্ত-ঘাম ঝরাতে ঝরাতে আলোর বুদ্বুদ থেকে পেয়ে গেছে পথিকেরা
বিশল্যকরণী, যাজ্ঞবল্ক্য মিশেছে কপিলে
এই অন্ধকার ছিল না যখন গৌড়বঙ্গে, আরাকানে সহজিয়া
সুর জেগেছিল বিপ্রলম্ভ বিরহের শ্লোকে
গুণরাজ খান আনন্দে মিশেছে দৌলত কাজীর গীতিকায়, চণ্ডীদাসে
কত আলাওল
আর কত শবর ও শবরীর প্রেম ভুসুকুর চর্যাগানে
কাঙাল বাঙালি পেয়েছিল আলোর ইশারা সেই নবম শতকে
আজকের অন্ধকার ছিল না তখন

আজ অন্ধকার লক্ষ কোটি ডানা মেলে উড়ছে
আর বিষাক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস অসাড় হয়ে আসছে ক্রমাগত
বোবা ও বধির হচ্ছে প্রাণ
চোখের কোটরে মনি দ্যুতিহীন
যাবতীয় সুখ-অসুখের গেরস্থালি থেকে উঠে এসে অন্ধকার
চেটে-পুটে খাচ্ছে শেকড়ের আলো
তার ডানায়-ডানায় শুধু পথ-হারানোর গভীর দহন

এই প্রাণ পড়ে রইল পথের উপরে, উত্তরপুরুষ, শোনো
এই প্রাণ ধর্ষিত সত্যের
দ্যাখো, থ্যাঁতলানো ঘাসের উপরে তবুও শিশিরবিন্দু, রেখে যাচ্ছি।
দধীচির হাড় নির্লজ্জ বিশ্বাসে

১০৭