পাতা:কবিতাসংগ্রহ ১ - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অন্ধকার, আমাকেই বারবার দীর্ঘতম ভেঙে দাও কেন
কেন এত তীক্ষ্ণ আগ্রাসন
অস্থি-মজ্জা চুষে খায় এই লেলিহান রাত, কেন এত হিংস্র
আয়োজন ভেঙে দেয় আমার সমগ্র?
শ্মশানবন্ধুরা ফিরে যাচ্ছে ঘরে, চিতা কি নিভেছে তবে? কোথাও
জাগে কেউ? নীলকমল না সে লালকমল?
অন্ধকার, স্বজন-হারানো তাপে আর কত অরন্ধন জাগি, মেনে নিই
আর কত সামাজিক বিজ্ঞতার চতুর মুখোশ?

এই কৃষ্ণপক্ষ এল হরপ্পার ধুলো মেখে, অন্ধ মানুষের চোখে
এই কালো রাত নাম-গোত্রহীন, কণিষ্কের
কবন্ধ-শরীর থেকে পলাশীর মাঠ জুড়ে শুধু আঁধি দ্যাখে আর্যাবর্ত
সিস্টুরে-রাঙানো পটচিত্র থেকে লাফ দিয়ে নামে
সাধের দেবতা সূর্যকে বগলে পুরে, কিংবদন্তি থেকে উঠে আসে
মোহিনী আড়াল, গায়ে তার রামনামাবলী
এই রাতে হালেবিদ থেকে মথুরা অবধি মুছে গেছে স্থাপত্যের আলো
এই রাতে স্তোত্রপাঠ করে শুধু শববাহকেরা
এখন, পশ্চিমে শান্তি
এখন, দক্ষিণে শান্তি
আর শান্তি পুবে ও উত্তরে কারণ শ্মশানে-শ্মশানে
জ্বলছে চিতা
আর কবরে-কবরে দাফনের লাশ শুধু
নামাজ-এ-জানাজা।
অর্থাৎ এখন শান্তি কল্যাণ হয়েই আছে।
অন্ধকার, যদি ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি হয়ে নামলে এভাবে
বাবু আর বিবিদের মদির নয়নে কাজল পরাও।
নামুক, নামুক তন্দ্রা, শান্ত ও নিস্পন্দ ঘুমে পার হোক রাত
শান্তি-সুখের নিদ্রা মোদের ধনমনিকে দিয়ে হে অন্ধকার

শিবা ও শকুনের উল্লাসে নাহয় কেঁপে উঠুক ইন্দ্রপ্রস্থ
সাকেত শহরে খিলখিলিয়ে নাহয় হাসুক পদ্ম
আর হাসতে-হাসতে ছুরি আমূল বসিয়ে দিক ঐ
মহেঞ্জোদাড়োর বুকে
হত্যার ভাস্কর্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ুক কামরূপ থেকে দ্বারকায়
এই তন্দ্রাতুর কৃষ্ণপক্ষে
খলবলিয়ে উঠুক পদ্মের তুমুল মুখোস রূপ কোঁয়রের দেশে
সারি-সারি চিতার আগুনে

১০৮