পাতা:কবিতাসংগ্রহ ১ - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আরো এক কালো রাত ছিল গোহপুরে, আগুনে দিয়েছি শিশুদের নারীদের
অভুক্ত শরীর স্বাহা অগ্নয়ে
ছিল আরো এক কালো রাত আরোয়ালে, দেওরালা গ্রামের মোচ্ছবে
নেচেছি গেয়েছি ইতি অগ্নয়ে
এই রাত নামল আবার আর্যাবর্ত জুড়ে, দিই তুলে যত আছে
কাঙালের খুদ ওম্‌ অগ্নয়ে
নামল এই রাত আসামের নির্জন পল্লীতে, মুম্বইয়ের বস্তিতে-বস্তিতে পোড়ে
মানুষের স্বপ্ন-সাধ স্বধা অগ্নয়ে
এই রাতে গান গায় রাইফেল, সাঁজোয়া গাড়ির পাহারায় পদ্ম ফোটে
ছাইরেণু মেখে ওম্ অগ্নয়ে
এই রাতে নেই তুলসীদাসের দোঁহা, নেই গুহক চাঁড়াল, নেই
অমৃতসমান কথা ইতি অগ্নয়ে
এই রাতে বন্ধু ভোলে সহজ বন্ধুতা, ভাই হাতে তুলে নেয়
ভাইয়ের মৃত্যু-পরোয়ানা স্বাহা অগ্নয়ে

যাব কোন্ দিকে? কোন দৃশ্যে ঢুকে পড়ব আমি?
যে-আমি মঞ্চের বাইরে ও ভেতরে
যে-আমি দৃশ্যের বস্তু ও আঙ্গিক
আমাকে স্বপ্নের কথা বলে যেতে দাও, বলে যেতে দাও
লোভ আর বিস্মৃতির কথা প্রতিদিন
কতবার হেরে যাই নিজের কাছেই, নিরুপায় টুকরো হতে হতে
প্রতিদিন খুঁজি ওষধির ঘ্রাণ এই সব বিপন্নতা
বলে যেতে দাও এখনো স্বপ্নের কাছে কেন ফিরে আসি?
যাব কোন্‌ দিকে? মুখোসে-মুখোসে ক্লান্ত হয়ে দেখি
আর কোনো মুখ নেই কোনোখানে
নিরুত্তর প্রশ্নের আঘাতে ভেঙে যাই, ভেঙে যাচ্ছি ক্রমাগত
ভেঙে যেতে-যেতে
আঁকড়ে ধরছি কবিতার এই তুচ্ছ খড়কুটো

বারুদের কটু গন্ধ নিয়ে জাগে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দিন
যাব কোন্ দিকে? আগুনের গান শুনি
জলের গভীরে অর্থাৎ এখন
প্রত্যেকের মহান ভারতে তৃষ্ণার সন্ততি নেই কোনো, তৃষ্ণা আজ
ক্ষণিক প্রপঞ্চ
মুহুর্মুহু দৃশ্যের বদল হচ্ছে
মুহুর্মুহু ভেঙে যাচ্ছে বিশ্বাস, বন্ধুতা
গোপন কোটর থেকে ফনা তুলছে হাজার নাগিনী

১১০