পাতা:কমললতা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফ্যাকাশে হয়ে গেল। বললাম, দেরি করলে হবে না ভাই, তোমাকে এখনি কিনে এনে দিতে হবে । এ ছাড়া আমার আর অন্য পথ নেই। শনে যতীনের সে কি কান্না । সে ভাবতো আমাকে দেবতা, ডাকতো আমাকে দিদি বলে। কি আঘাত কি ব্যথাই সে যে পেলে, তার চোখের জল আর শেষ হতেই চায় না। বললে উষাদিদি, আত্মহত্যার মতো মহাপাপ আর নেই। একটা অন্যায়ের কাঁধে আর একটা তার বড়ো অন্যায় চাপিয়ে দিয়ে তুমি পথ খাঁজে পেতে চাও? কিন্তু লােজা থেকে বাঁচবার এই উপায় যদি তুমি স্থির করে থাকো দিদি, আমি কখনো সাহায্য করব না। এ ছাড়া তুমি আর যা আদেশ করবে। আমি সবচ্ছন্দে পালন করব । তার জন্যেই আমার মারা হলো না । ক্ৰমশঃ কথাটা বাবার কানো গেল । তিনি যেমন নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব, তেমনি শান্ত, নিরীহ প্রকৃতির মানষ। আমাকে কিছই বললেন না, কিন্তু দখে, লক্ষজায় দাঁতন দিন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারলেন না । তারপরে গাের দেবের পরামর্শে আমাকে নিয়ে নবদ্বীপে এলেন। কথা হলো, মন্মথ এবং আমি দীক্ষা নিয়ে বৈষ্ণব হবো ; তখন ফুলের মালা আর তলসীর মালা বদল ক’রে নতন আচারে হবে আমাদের বিয়ে । তাতে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হবে কিনা জানি নে, কিন্তু যে শিশ গভে এসেছে, মা হয়ে তাকে যে হত্যা করতে হবে না। সেই ভরসাতেই যেন অধোক বেদনা মছে গেল । উদ্যোগ আয়োজন চললো, দীক্ষাই বলো আর ভেকই বলো, তাও আমাদের সাঙ্গ হলো, আমার নতুন নামকরণ হলো- কমললতা ; কিন্ত্ত তখনো জানিনে যে বাবা দশহাজার টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েই তবে মন্মথকে রাজি করিয়েছিলেন ; কিন্ত্ত হঠাৎ কি কারণে জানি নে বিয়ের দিনটা দিনকয়েক পিছিয়ে গেল। বোধ হয়। সপ্তাহখানেক হবে । মন্মথকে বড় একটা দেখি নে, নবদ্বীপের বাসায় আমি একলাই থাকি। এমনই ক'দিন যায়। তারপরে শভেদিন আবার এসে উপস্থিত হলো । স্নান করে, শচি হয়ে শান্ত মনে ঠাকুরের প্রসাদী মালা হাতে প্রতীক্ষা করে রইলাম। বাবা বিষন্নমখে একবার ঘরে গেলেন, কিন্ত্ত নবীন বৈষ্ণবের বেশে মন্মথর যখন দেখা মিললো, হঠাৎ সমস্ত মনের ভেতরটায় যেন বিদ্যুৎ চমকে গেল। সে আনন্দের কি ব্যথার, ঠিক জানি নে, হয়ত দুই-ই ছিল, কিন্ত্ত ইচ্ছে হলো উঠে গিয়ে তাঁর পায়ের ধলো মাথায় নিয়ে আসি ; কিন্ত্ত লক্ষজায় সে আর হয়ে উঠল না। আমাদের কলকাতার পরানো দাসী কি সব জিনিসপত্র নিয়ে এলো, সে আমাকে মানষি করেছিল, তার কাছেই দিন পিছোবার কারণ শনিতে পেলাম । কতকালের কথা, তব গলা ভারী হইয়া তাহার চোখে জল আসিয়া পড়িল । বৈষ্ণবী মািখ ফিরাইয়া অশ্লী মছিতে লাগিল । মিনিট পাঁচ-ছয় পরে জিজ্ঞাসা করিলাম, কারণটা কি বললে সে ? বৈষ্ণবী কহিল, বললে, মন্মথ হঠাৎ দশ হাজারের বদলে বিশ হাজার টাকা দাবি করে বসলো। আমি কিছই জানতাম না, চমকে উঠে। জিজ্ঞাসা করলাম, মন্মথ কি টাকার বদলে রাজি হয়েছে নাকি ? আর বাবাও বিশ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন ? দ্বাসী বললে, উপায় কি দিদিমণি ? ব্যাপারটা ত সহজ নয়, প্রকাশ হয়ে পড়লে যে Ro