পাতা:কমললতা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঘলপতেীয়া নদীর কতকটা অংশ বোধ কীিয় গ্রামবাসীরা পরিস্কৃত করিয়াহে, সম্মুখের সেই সবচ্ছ, কালো অলপ পরিসর জলটুকুর উপরে ছোট ছোট রেখায় চাঁদের ও সন্ধ্যাতারার আলো পাশাপাশি পড়িয়া ঝিকমিক করিতেছে-যেন কল্টিপাথরে ঘষিয়া স্যাকরা সোনার দাম যাচাই করিতেছে । কাছে কোথাও বনের মধ্যে বোধ করি অজস্র কাঠমল্লিকা ফুটিয়াছে, তাহারই গন্ধে সমস্ত বাতাসটা ভারী হইয়া উঠিয়াছে এবং নিকটে কোন গাছে অসংখ্য বকের বাসা হইতে শাবকগণের একটানা ঝুমঝুম শব্দ বিচিত্র মাধ্যযে অবিরাম কানে আসিয়া পশিতেছে। এ সবই ভালো এবং যে দটা লোক তদগত চিত্তে জড়ভরতের মত বসিয়া আছে তাহারাও কবি সন্দেহ নাই, কিন্তু এ দেখিতে এই জঙ্গলে সন্ধ্যাকালে আসি নাই, নবীন বলিয়াছিল একপাল বোলুটুমী আছে এবং সকলের সেরা বোল্টুমী কমললতা আছে। তাহারা কোথায় ? ডাকিলাম, গহর । গহর ধ্যান ভাঙিয়া হতবন্ধির মত আমার দিকে চাহিয়া রহিল। বাবাজী তাহাকে একটা ঠেলা দিয়া বলিল, গোঁসাই, তোমার শ্ৰীকান্ত না ? গহর দ্রুতবেগে উঠিয়া আমাকে সজোরে বাহপাশে আবদ্ধ করিল। তাহার আবেগ থামিতে চাহে না এমনি ব্যাপার ঘটিল। কোনমতে নিজেকে মক্ত করিয়া বসিয়া - পড়িলাম,--বলিলাম, বাবাজী, আমাকে হঠাৎ চিনলেন কি করে ? বাবাজী হাত নাড়িলেন-ও চলবে না গোঁসাই, ক্রিয়াপদের শেষের ঐ সম্প্রমের দন্ত্য ন’টি বাদ দিতে হবে । তবে ত রস জামবে । বলিলাম, তা যেন দিলাম, কিন্তু হঠাৎ আমাকে চিনলে কি করে ? বাবাজী কহিলেন। হঠাৎ চিনবো কেন ? তুমি যে আমাদের বান্দাবনের চেনা মানযি গোঁসাই, তোমার চোখ দটি যে রসের সমন্দির-ও যে দেখলেই চোখে পড়ে । যেদিন কমললতা এলো-তারও এমনি দটি চোখ-তারে দেখেই চিনলাম-কমললতা, ‘কমললতা, এতদিন ছিলে কোথা ? কমল এসে সেই যে আপনার হলো তার আর আদি-অন্ত বিরহ-বিচ্ছেদ রইল না । এই তা সাধনা গোঁসাই, একেই তা বলি রসের বললাম, কমললতা দেখবো বলেই ত এসেছি গোঁসাই, কই সে ? বাবাজী ভারি খাশি হইলেন, বলিলেন দেখবে তাকে ? কিন্তু সে তোমার অচেনা -নয় গোঁসাই, বান্দাবনে তাকে অনেকবার দেখেচোঁ । হয়ত ভুলে গেছে, কিন্তু দেখলেই চিনবে সেই কমললতা । গোঁসাই, ডাকো না একবার তারে । এই বলিয়া বাবাজী গহরকে ডাকিতে ইঙ্গিত করিলেন । ইহার কাছে সবাই গোঁসাই, বলিলেন, বিলো গে শ্ৰীকান্ত এসেছে তোমাকে দেখতে । গােহর চলিয়া গেলে জিজ্ঞাসা করিলাম, গোঁসাই, আমার কথা বঝি তোমাকে গহর সমহন্ত বলেচে ? বাবাজী ঘাড় নাড়িয়া কহিলেন, হাঁ, সমস্ত বলেচে । তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, গোঁসাই, ছ’-সাত দিন আসো নি কেন ? সে বললে, শ্ৰীকান্ত এসেছিল। তুমি যে O