পাতা:কমলা - আশুতোষ ভট্টাচার্য্য.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কমলা নিশীথের নীরব, প্রগাঢ় অন্ধকার ভেদ ক’রে যখন পতি-পুত্ৰ-শোকাতুরার রাদনের রোল উঠতে থাকে, তখন মনে হয়-“ন জানে সংসারং কিমমৃতময়ং কিং বিষময়ং ।” তারপর আবার যখন জীবন-সংগ্রামের কঠোর প্রতিযোগিতা ও পরাভব, হৃদয়ে নৈরাশ্য,-দেহে শ্ৰান্তি ও অবসাদ ঢেলে দেয়, প্রিয় সঙ্গীরা সব নিজের নিজের স্বাৰ্থ নিয়ে দূরে দূরে স’রে পড়ে, নবযৌবনের সেই সব অতৃপ্ত আশা ও বাসনাপুঞ্জ ভগ্নদুর্গের ছিন্নপতাকার মত জড়িয়ে সড়িয়ে একাধারে প’ড়ে থাকে, স্নেহ ও ভালবাসার জনগুলি সব একে একে আমাদের এক ফেলে। চ’লে যেতে আরম্ভ করে, তখন কার মনে হয় না যে, এ প্রত্যক্ষ বিষময় সংসারকে কি ক’রে একদিন তেমন সুখময় বা অমৃতময় ব’লে মনে হ’য়েছিল । স্বভাবের শোভা সুখীর সুখ বাড়াতে পারে, কিন্তু দুঃখীর " छ्:थ ' কমাতে পারে না। তাই বা কোনটা ক’দিন থাকে ?—শরতের পূর্ণ সরিৎ ও সরোবরের শোভা হেমন্তে দেখতে পাওয়া যায় না, বসন্তের বনশ্ৰী নিদাঘের নিঃশ্বাসেই শুকিয়ে ঝ’রে যায়, সন্ধ্যের স্বর্ণমেঘগুলি রাত্রির অন্ধকারে হারিয়ে যায়, উষার আনন্দ-রাগ প্ৰভাতের অবসাদ-মানতায় বিলীন হ’য়ে যায় ! মোটের ওপরে উপভোগের সব আনন্দ ও সুখই ক্ষণিক, ত্যাগের আনন্দ ও তৃপ্তিই স্থায়ী ; কিন্তু সংসারে ত্যাগের পথ বড়ই সঙ্কীর্ণ, বহুবাধাপূর্ণ ও বিস্ত্রসস্কুল ৷” সন্ন্যাসী । কিন্তু ভোগের মধ্যেই যে ত্যাগ তাই যথার্থ ত্যাগ-সংসারে থেকেই যে সন্ন্যাসী সেই প্ৰকৃত সন্ন্যাসী । আসক্তি নিয়ে ভোগের সামগ্ৰী থেকে দূরে থাকাকে ত্যাগ বলা যায় না, জটা-বন্ধলধারণ বা কপানী-কম্বলগ্ৰহণকেও সন্ন্যাস বলা যায় না । কৌপীনধারী কত জটাধর সংসারসুখের দিকে সতৃষ্ণদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তা লক্ষ্য ক’রেছেন কি ? সংসার | ૨૩