পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X of e করুণ চত্বরের তোরণের নিকট দাড়াইয়াছিল, তাহারা লোকমুখে শুনিতে পাইল যে, যুবরাজ তখনই কপিশায় যাত্রা করিবেন। সেই সংবাদ বিছাদ্বেগে প্রাসাদতোরণ হইতে নগরতোরণ পর্য্যন্ত সঞ্চারিত হইল । নগরতোরণের নিকটে জনৈক বিকলাঙ্গ বৃদ্ধ সৈনিক দাড়াইয়াছিল, সে সহস জয়ধ্বনি করিয়া উঠিল। হণ-বিজয়ী স্কন্দ গুপ্ত তখন পাটলিপুত্রের নাগরিকগণের নয়নপুত্তলিকা। বৃদ্ধের ক্ষীণকণ্ঠোথিত জয়ধ্বনি শেষ হইবার পূৰ্ব্বে ঘোররবে জনতা গর্জন করিয়া উঠিল ; লক্ষ কণ্ঠে স্কন্দ গুপ্তের জয়ধ্বনি উচ্চারিত হইল। তোরণের নিকটে রাজপথের এক পার্থে দুই তিনজন ভিক্ষু দাড়াইয়াছিল, তাহাদিগের মধ্যে একজন জয়ধ্বনি শুনিয়া শিহরিয়া উঠিল। প্রথম ভিক্ষু দীৰ্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিল, “আর কতদিন ?” দ্বিতীয় ভিক্ষু অপরদিকে মুখ ফিরাইয়া কহিল, “অধিক দিন নহে, ছয় মাস অপেক্ষা কর।” “ছয় মাস পরে কি হইবে ?” “ইস্তারাই স্কন্দগুপ্তের নামে নিষ্ঠীবন ত্যাগ করিবে ।” তখন অন্তঃপুবে বাসুদেবমন্দিরের সম্মুখে পুরমহিলাগণ বরণসামগ্ৰী লইয়া যুবরাজের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিলেন। ক্ষণকাল পরে সম্রাট ও যুবরাজ অন্তঃপুর হইতে আসিয়া বাসুদেবমন্দির-প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিলেন । মহাদেবী তখন মন্দিরের গর্ভগৃহে ধ্যানমগ্ন ছিলেন । একজন অস্তঃপুরিকা র্তাহাকে সম্রাট ও যুবরাজের আগমন সংবাদ জ্ঞাপন করিল, মহাদেবী গর্ভগৃহের বাহিরে আসিলেন। বরণ আরম্ভ হইল, একদণ্ডকাল ধরিয়া গুপ্তবংশজাত সমস্ত পুরস্ত্রী যুবরাজকে বরণ করিলে মহাদেবী বরণপাত্র লইয়া বরণ আরম্ভ করিলেন । সহসা তাহার হস্ত কম্পিত হইল, পাত্ৰস্থ লাজরাশি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইল। সম্রাট্র বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “দেবি, কি হইল ?” মহাদৈবী লজ্জায় অধোবদন হইলেন । পরিচারিক দ্বিতীয় বরণসামগ্ৰী লইয়া আসিল । মহাদেবী বরণাস্তে পাত্র দুরে নিক্ষেপ করিয়া পুত্রকে গাঢ় আলিঙ্গনবদ্ধ করিলেন।