পাতা:করুণা - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ পরিচ্ছেদ গোপালের দেশ আদ্র যমুনা-সৈকতে অশ্বথতলে এক বৃদ্ধ ভূমি-শয্যায় শয়ান ছিল, তাহার পাশ্বে বসিয়া এক অতুলনীয় রূপবতী রমণী নীরবে অশ্রুধিসজ্জন করিতেছিল । বুদ্ধ ধীরে ধীরে কহিল, “মা, এই গোপালের দেশ ” তরণী জিজ্ঞাসা করিল, “গোপাল কই বাবা ?” “কবে বুঝিবে, মা ? আজি আমার শেষ ” “কোথায় যাইবে, বাবা ?” “শেষে সকলে যেখানে যায় ।” “আমি কোথায় থাকিব ?” “এই পাচবৎসর ধরিয়া বলিয়া আসিতেছি মা, আজি শেষবার বলি। মা, তুই যে দেবী, কাহার মায়া তোকে আচ্ছন্ন করিয়া আছে ?” “কি জানি বাবা ? মাঝে মাঝে স্বপ্নের মত বোধ হয় ” “কি বোধ হয়, মা ?” “দূর দেশে, সরোবরে পদ্মবনে, আমার মরাল জলক্রীড়া করিত। মরণাহত বুদ্ধের নয়নদ্বয় উজ্জল হুইয়া উঠিল, বৃদ্ধ কহিল, “নারায়ণ, এতদিন কি মুখ তুলিয়া চাহিলে ? মা, মা, সে যে গৌড়দেশ, সে অতি সুন্দর, এমন সুন্দর দেশ আর কখনও দেখি নাই। সে যে তোর উদ্যান, তোর সাধের উদ্যান ! এতদিনে কি তোর নয়নপথের যবনিকা সরিয়া গেল, মা ?” “বাবা, সেখানে যেন অষ্টমার কে ছিল ?” “ছিল ? এখনও আছে, সে যে ভানুমিত্র ? তুমি যে, তাহার নয়নের পুত্তলী ছিলে, মা ? মা, গৌড়দেশ আমি আর দেখিব না, কিন্তু তুমি দেখিবে । আমাকে এই গোপালের দেশে, গোপালের হাতে সঁপিয়া দিয়া সুন্দর গৌড়দেশে ফিরিয়া যাও, মা ! তোমার প্রাসাদে, তোমার উষ্ঠানে ফিরিয়া যাও, যেমন কপোতকপোতীর মত বাস করিতে তেমনি করিয়া বাস করিও, সরোবরের মৰ্ম্মরনিৰ্ম্মিত ঘটায়