পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
কলিকাতার ইতিহাস।

একটি অতি পবিত্র তীর্থ ও পূজার স্থান। সত্যযুগে আদর্শসতী সতী পিতা দক্ষরাজের যজ্ঞে পতিনিন্দা শ্রবণ করিয়া কলেবর পরিত্যাগ করিলে, যৎকালে বিষ্ণু সুদর্শনচক্র দ্বারা সেই অঙ্গ ছেদন করিতে প্রবৃত্ত হন, সেই সময় সতীদেহের চারিটি অঙ্গুলী এই স্থানে পতিত হইয়াছিল। তদবধি এই স্থানে শাক্ত হউক. শৈব হউক, গণপত্য হউক, সর্বসম্প্রদায়ের হিন্দুর নিকট ইহা মহাতীর্থ। অতি প্রাচীন কাল হইতে লোক মনস্কামনাসিদ্ধির নিমিত্ত এই স্থানে মানসিক করিয়া থাকে, এবং প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে, অনেক স্থলে কামনা সফলও হইয়াছে। যোগী, সন্ন্যাসী ও সাধু মহাপুরুষেরা এই স্থানে সমবেত হইয়া থাকেন এবং মহাদেবীর পূজা করিয়া আপনাদের গন্তব্য পথে চলিয়া যান। ভারতবর্ষের উত্তরাংশের হিন্দু করদ রাজারা কলিকাতায় আসিলে, মা কালীর পূজা না দিয়া তাঁঁহারা স্বরাজ্যে প্রত্যাবৃত্ত হন। দেশের সর্বত্রই এই মন্দিরের পবিত্রতার খ্যাতি পরিব্যাপ্ত। হিন্দুরা ইহাকে এতদূর ভক্তি করে যে, এই বিষয়ে ইহা কাশীর বিশ্বেশ্বরের মন্দিরের তুল্য বলা যাইতে পারে। কথিত আছে যে, সেকালে ইষ্টইণ্ডিয়া কোম্পানিও কালীঘাটে দেবীর পূজা দিতেন। প্রথম প্রথম তাঁহারা ধুমধামের সহিত পুণ্যাহ উৎসব যথানিয়মে সম্পন্ন করিতেন, এবং সেই উপলক্ষে দেবী, পূজানুষ্ঠানে যোগদান করিতেন।[১]


  1. এ সম্বন্ধে খৃষ্টান মার্শম্যান সাহেব লিখিয়াছেন;— গত সপ্তাহে গবর্ণমেণ্টের প্রতিনিধি কতকগুলি ইংরেজ কালীঘাটে গিয়াছিলেন, এবং ইংরেজরা সংপ্রতি এদেশে যে সকল বিজয় লাভ করিয়াছেন, তন্নিমিণ্ড কম্পানির নামে হিন্দুদেব দেবীর নিকট পূজা দিয়াছেন। পাঁচ হাজার টাকা পূজা দেওয়া হইয়াছে। সহস্র সহস্র বাঙ্গালী এই প্রতিমার নিকট ইংরেজদিগের পূজা দেওয়া দেখিয়াছে। এই কার্য্যে আমরা সবিশেষ মর্মাহত হইয়াছি, কারণ এই ব্যাপারে বাঙ্গালীরা কেন আমাদিগকে টিটকারী দিবার জন্যই উল্লাস প্রকাশ করিতেছে।”