পাতা:কলিকাতার ইতিহাস.djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
কলিকাতার ইতিহাস।

শাসনকর্ত্তা ছিলেন না। পরন্তু কোনও ঐতিহাসিক তত্ত্ব কেবল মনোভাব দ্বারা অথবা সম্ভব অসম্ভবের বিচারণা দ্বারা মীমাংসা করা উচিত নয়,—স্পষ্ট প্রমাণ প্রদর্শনপূর্ব্বক মীমাংসা করা কর্ত্তব্য। এ বিষয়ে যে কিছু প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে, তাহাতে অন্ধকূপহত্যা ব্যাপার যে যথার্থই ঘটিয়াছিল, এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হইতে হয়।

 কলিকাতার ইতিবৃত্তে আর একটা অতি বিষম শোচনীয় দুর্ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল। সে ঘটনা ১১৭৬ বঙ্গাব্দের ভীষণ মন্বন্তর। ১৭৭০ খৃষ্টাব্দে যে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ ও তদানুষঙ্গিক মহামারী উপস্থিত হইয়াছিল, তজ্জন্য উক্ত অব্দটি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হইয়া থাকিবে; কারণ তাহাতে কেবল কলিকাতা নহে, সমস্ত বঙ্গদেশই উৎসন্নপ্রায় হইয়া উঠিল। “ছিয়াত্তরের মন্বন্তর” অদ্যাপি প্রবাদবাক্য হইয়া রহিয়াছে,—এখনও লোকে ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের কথা স্মরণ করিয়া আতঙ্কে শিহরিয়া উঠে। হিকী সাহেবের মতে, উক্ত অব্দের ১৫ই জুলাই হইতে ১০ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭৬ হাজার লোক কলিকাতার রাস্তাতেই মরিয়া পড়িয়াছিল।[১] নগরের ভিতর এমন একটা কোণ ছিল না, বা কলিকাতার নিকটে এমন কোনও গুপ্তস্থান ছিল না, যেখানে জীবিত, মুমূর্ষু ও মৃত


  1. সে আজ ১৩৫ বৎসর পূর্ব্বেকার কথা। সে সময়ে কলিকাতার আয়তন ও লোকসংখ্যা যে বর্ত্তমান সময়াপেক্ষা পরিমাণে অল্প ছিল, একথা বলা বাহুল্য। সেই এক কলিকাতাতেই ৪৭।৪৮ দিনের মধ্যে ৭৬ হাজার মানুষ আহারাভাবে কালকবলিত হইয়া রাজপথে পতিত। তদ্ভিন্ন আরও কত লোক অনশনে গৃহে মরিয়া পড়িয়াছিল। তাহাদের সংখ্যা অবশ্য এ হিসাবে নাই। একবার ভাবিয়া দেখুন, কি শোচনীয় ব্যাপার!!