পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৩ কলিকাতা সেকালের ও একালের । ললাট-দেশ, গৈরিক-বসন-মণ্ডিত, ত্রিশূল-ধূত, সেই সুদীর্ঘ মুর্কি—যে দেখিত, সেই সসন্ত্রমে ভূমে অবনত হইয়া প্ৰণাম করিত। কামদেব সংস্কৃতজ্ঞ মহাপণ্ডিত ছিলেন। ক্রমাগতঃ তীর্থ-ভ্রমণে, সাধুসঙ্গে, পণ্ডিতগণের সহিত আলাপে—তিনি একজন দেশ-বিখ্যাত পণ্ডিত হইয়া পড়িলেন। লোকে যখন তাহার চিত্ত-বলের কথা শুনিল, কি করিয়া পাষাণে প্রাণ বাধিয়। তিনি র্তাহার মুতা-পত্নীর সৎকার ও সদ্যোপ্রস্থত বালককে পরিত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসাশ্রম গ্রহণ করিয়াছেন—এসব কথা লোকে যখন জানিতে পারিল, তখন অনেকেই তাহার শিষ্য শ্রেণীভুক্ত হইল। মানসিংহের সহিত কিরূপে তাহার পরিচয় হয়, কি করিয়া মহারাজ মানসিংহ তাহার শিষ্য হয়েন, তাহা আমরা অগ্ৰে বলিয়াছি। এই কামদেব ব্রহ্মচারী হইতেই, বড়িশার সাবর্ণ-চৌধুরী বংশীয় জমীদারগণের উদ্ভব। কি করিয়া এ উদ্ভব এবং প্রতিষ্ঠা হইল, তাহ পরে বিবৃত হইতেছে। বঙ্গ-বিজয়ের পর, মানসিংহের মনে গুরুর অনুরোধ বাক্য স্মরণ হইল । তাহারই আশীৰ্ব্বাদে, তিনি প্রতাপাদিত্য চাদরায় ও কেদার রায়কে নিজ্জিত করিতে পারিয়াছেন—এরূপ একটা বিশ্বাস, তাহার মনে দৃঢ়ৰূপে বদ্ধমূল হয়। তিনি কামদেব ব্রহ্মচারীর বর্ণনানুসারে, গুরুপুত্রের সন্ধান আরম্ভ করিলেন। মহারাজ মানসিংহ পাটুলির রাজা শূদ্রমণির সহায়তায়, কামদেব ব্রহ্মচারীর পরিত্যক্ত পুত্র, লক্ষ্মীকান্তকে কালীঘাট হইতে খুজিয়া বাহির করিলেন। শূদ্রমণি এই অনুসন্ধানের পুরস্কার রূপে, মহারাজের নিকট জমীদারী ও রাজোপাধি প্রাপ্ত হন । লক্ষ্মীকান্তকে খুজিয়া পাইয়া, মানসিংহের মনে আর আনন্দ ধরে না। এই লক্ষ্মীকান্তই তাহার গুরু-দক্ষিণ। তিনি র্তাহার অধীনস্থ-বর্গকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন—“তোমরা একটী নিষ্কর জমীদারীর সন্ধান কর। আমি তাহা আমার গুরু-পুত্রকে অর্পণ করিব।” মানসিংহের আদেশ ক্রমে, লক্ষ্মীকান্ত, বড়িশার পার্শ্ব-ভূক্ত, নানাস্থানের জমীদারী ও কয়েকটা—পরগণা প্রাপ্ত হন। তাছার বংশধরেরা আজও ইহার স্বত্ব ভোগ করিয়া আসিতেছেন। ঘটক-কারিকার মধ্যে অনুসন্ধান করিয়া, আমরা লক্ষ্মীকান্ত সম্বন্ধে কতক গুলি বিবরণ সংগ্ৰহ করিয়াছি। তাহা হইতে, মানসিংহের বঙ্গে আগমন, রাজ শূদ্রমণির সহায়তায়-গুরুপুত্রকে অন্বেষণ, জমীদারী—দান, রায় চৌধুরী উপাধিস্থান,কালীঘাটের নিকটে সম্পত্তি দান প্রভৃতির কথা বিশদভাবে