পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় । ৭৩ মানসিংহ ও প্রতাপাদিত্যের মধ্যে, এই ভীষণ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ দানের স্থান আমাদের নাই। দীর্ঘকাল-ব্যাপী বিগ্রহে, দিন দিন সৈন্তক্ষয় ইতেছে দেখিয়া, মানসিংহ অতিশয় নিরাশ হইয়া পড়িলেন। কচুরায়, ঘব ও ভবানন্দ প্রভৃতিকে সম্বোধন করিয়া মানসিংহ বলিলেন—“আমি লবুল প্রভৃতি অনেক দেশ জয় করিয়াছি—কিন্তু কোথাও এরূপ শোচনীয় চাবে পরাজিত হই নাই । আমার পরাক্রমে, সমগ্র ভারত-সাম্রাজ্য বকম্পিত হইয়াছে, কিন্তু আজ আমাকে প্রতাপের পরাক্রম দেখিয়া কম্পিত ইতে হইতেছে। আমি.এখন বুঝিতেছি—সম্রাট আমাকে মৃত্যুর কবলগত দুইবার জন্তই, বঙ্গদেশে প্রেরণ করিয়াছেন । অপরন্তু এ যুদ্ধে পরাজিত চইয়া, আগ্রায় ফিরিলেও, আমি তাহার ক্রোধানল হইতে মুক্তি পাইৰ না।” * * এই কথা শুনিয়া–কচুরীয়, ভবানন্দ প্রভৃতি বলিলেন— ‘মহারাজ ! বিজয়-লক্ষ্মী আপনার অঙ্কগত-প্রায় । এরূপ সময়ে, আপনি যদি একটু ক্লেশ স্বীকার করিয়া, ইহার সুফল ভোগ না করেন—তাহ। হইলে বুঝিলাম, বীরধৰ্ম্ম পৃথিবী হইতে অস্তুৰ্ছিত হইয়াছে। আমি গতরাত্রে স্বপ্নে দেখিয়াছি, যশোরের অধিষ্ঠাত্রী-দেবী, প্রতাপের উপর বিমুখ হইয়াছেন। ভগবান–রামচন্দ্র, লঙ্কাসমরে ভগবতীর উদ্বোধন করিয়া, যেরূপে বানর-চমূ মধ্যে শক্তিসঞ্চার করিয়াছিলেন—আপনিও সেইরূপ মহামায়ার পূজা করিয়া, সৈন্যদের হৃদয়ে শক্তি-সঞ্চার করুন। ইহাতে নিশ্চয়ই আপনার অভীষ্ট লাভ হইবে।” উপস্থিত অন্যান্ত সকলে, কচুরায়ের এই কথার সমর্থন করিল। মহারাজ মানসিংহ, মহাসমারোহে ভগবতীর পুজা করিলেন। সৈন্ত-মধ্যে এরূপ একটা জনরব প্রচার করিয়া দিলেন—“ভগবতী মানসিংহের ভক্তিতে প্রসন্না হইয়া প্রতাপের পক্ষ ত্যাগ করিয়াছেন । সুতরাং এখন প্রতাপকে কেহই রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে না।” * বলা—বাহুল্য, এই উৎসাহবাণী মানসিংহের সেনামধ্যে এক নূতন শক্তির সঞ্চার করিল। তৎপর দিন, আবার উভয়পক্ষে ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ হইল। প্রতাপ প্রাণপণে যুঝিতে লাগিলেন। মানসিংহও ভীমবেগে প্রতাপকে আক্রমণ করিলেন। উভয়পক্ষের রণ-মদোন্মত্ত বীরগণ, জীবনাশা ত্যাগ করিয়া মহী-সমরে প্রবৃত্ত হইল। প্রতাপের এই বার কপাল ভাঙ্গিল। তাহার দক্ষিণ হস্ত স্বরূপ—সুৰ্য্যকান্ত সমরে পতিত হইলেন। স্বৰ্য্যকাস্তের পতনে, যশোরের সেনাদল উৎসাহ-হীন ও বিশৃঙ্খল

  • শাস্ত্রী মহাশয়ের প্রতাপাদিত্য ।

ه به