পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮e কলিকতা সেকালের ও একালের পলাশীক্ষেত্রে বিজয় লাভ দ্বারা, ভারতে ইংরাজ রাজত্বের প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হয় নাই। র্তাহাদিগকে ইহার পূৰ্ব্বে শতাধিক বৎসর ধরিয়া স্বার্থ-সংরক্ষণ জন্য, বহুবিধ চেষ্টা করিতে হইয়াছিল । মুসলমান শাসন-কর্তাদের হলে বহুবিধ অত্যাচার সহ করিতে হইয়াছিল। কারণ মোগল তখন দেশের রাজা ও ইংরাজ-বণিক তাহদের প্রজা মাত্র । তাহার উপর পটুগীজ ডচ, প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিক-সম্প্রদায়ের প্রতিযোগিতা যে কম ছিল তাহা নহে। এই প্রতিযোগিতা সহিয়া অদম্য সাহস ও স্থিরবুদ্ধি বলে পরিণামে ইংরাজই জয়ী হইয়াছিলেন । এ জয়লাভ করিতে তাহীদের যে কত কষ্ট, কত আপদ বিপদ সহিতে হইয়াছিল, তাহ পূর্বের অধ্যায় সমূহে বিবৃত হইয়াছে। অতীত ইতিহাস হইতে প্রমাণ হয়, মোগল-সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলেই ইংরাজদের কিছু বেশী কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। হিন্দুদিগের ন্যায় তাহারা সমান ভাবেই মুসলমান হস্তে উৎপীড়িত হইয়াছিলেন। ঔরঙ্গজেবের প্রতিনিধিরূপে নবাব সায়েস্তার্থীই ইংরাজ-বণিকগণকে নানাবিধ কঠোর অগ্নি-পরীক্ষার মধ্যে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন। এখন এই আসমূদ্র হিমাচলব্যাপী ভারতবর্ষ ইংলণ্ডের রাজা ও ভারতের সম্রাটের শাসনাধীন ও তাহারই রাষ্ট্র সম্পত্তি। কিন্তু এই বিশাল সাম্রাজ্য, বণিকরূপী ইষ্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানীর কৰ্ম্মচারিগণের প্রতিভাবলে অজ্জিত। পলাশী যুদ্ধের পরে দেশের লোকে ইংরাজের শক্তি সামর্থ্য ও প্রভাবের কথা বুঝিতে পারিয়াছিল বটে। কিন্তু তাহারা ইহার আগে জানিতে পারে নাই, যে ইংরাজ জাতি শক্তি ও সাহসে, বুদ্ধি ও প্রতিভায় অতুলনীয়। পলাশী আমলের পূৰ্ব্বে অনেক কৰ্ম্মবীর স্বদেশ-ভক্ত ইংরাজ ভারতে ইংরাজ রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণত পরিশ্রম করিয়া গিয়াছেন । তাহণদের মধ্যে বৰ্ত্তমান কলিকাতার প্রাণ-প্রতিষ্ঠাতা জব চাৰ্ণক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাঠক ! আজিকালকার এই গ্যাসালোক উজ্জ্বলিত, বড়বাজার, হাটখোল প্রভৃতির চিত্র, চিত্ত হইতে মুছিয়া ফেলুন। কল্পনার সহায়তায় দেখুন, এই সকল স্থানাধিকৃত সেকালের স্বতালুটা, কলিকাতা ও গোবিন্দপুরের চারিদিকে ভীষণ জঙ্গল সমাচ্ছন্ন। একদিকে শিয়ালদহ, অপরদিকে হাওড়া ও দক্ষিণে চৌরঙ্গী, কালীঘাট ও ভবানীপুর, এই বিস্তৃতভূভাগ কেবলমাত্র খাত ও পঙ্কিল বাদ ও ভূমিপূর্ণ। আর এই সমস্ত বাদায় কুম্ভীর, জঙ্গলে বাঘ এবং ভাঙ্গায় নরহস্ত লুণ্ঠনকারী ডাকাতের দল।