পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কলিকাতা সেকালের ও একালের । 8 כי9 চার্ণক হুগলীতে দুইমাস থাকিয়া, সোরা বোঝাই শেষ করিয়াজন •ত্যাগ করিলেন । হুগলী ত্যাগের পর, হিজলী অবরোধ ব্যাপার,—চার্ণকের জীবনে একটা উজ্জ্বলতম ঘটনা। হিজলীর ব্যাপারে তিনি যেরূপ অত্যধিক সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধিকৌশল দেখাইয়াছিলেন, তাহাতে র্তাহার প্রশংসা না করিয়া থাকা যায় না। যে মোগল-সুবাদার ইচ্ছা করিলে, অসংখ্য লৈ৯ প্রেরণ দ্বারা, তাহার ধ্বংসসাধন করিতে পারিতেন—তিনিও তাহার কূটবুদ্ধি কৌশলে পরাজিত হইলেন । ইংরাজের সমরশক্তি, বঙ্গদেশে প্রথম জ্যোতিৰ্ম্ময় স্ফুলিঙ্গ প্রকাশ করিল। মোগল-রাজশক্তির-নিকট বাহুবলের শক্তি দেখাইয়া, চার্ণক সম্রাট ঔরঙ্গজেব ও নবাব সায়েস্তা থাকে স্পষ্টই বুঝাইয়া দিয়াছিলেন—“ইংরাজশক্তি একেবারে উপেক্ষণীয় নহে। প্রয়োজন হইলে, তাহারা আত্ম-স্বাৰ্থ রক্ষার জন্ত, অস্ব পর্য্যন্ত ধরিতে পারে।” সায়েস্তার্থণর পর,—নবাব ইব্রাহিম খা বঙ্গদেশের হৰ্ত্তাকৰ্ত্ত-বিধাতা হইয়া আসেন। ইতিপূৰ্ব্বে তিনি কাশ্মীর, লাহোয়, বিহfর প্রভৃতি প্রদেশের শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন। নবাব ইব্রাহিম খা—অতি উদার প্রকৃতির লোক ছিলেন । চার্ণক স্বতালুটাতে আশ্রয় লইবার এক বৎসর পরে, তিনি তাহাকে পূর্ব প্রতিশ্রুত সম্রাট-স্বাক্ষরিত ফরমান আনা ইয়া দেন। এই ফরমানের বলে, চার্ণক স্বতালুটতে ইংরাজের বাণিজ্য কুঠ স্থাপিত করিয়া, অসংখ্য সৌধমালাবেষ্টিত, ইন্দ্রপুরী তুল্য বৰ্ত্তমান কলিকাতার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন । পাঠক ! একবার কল্পনার সাহায্যে সেই ১৬৯০ সালের আগষ্ট মাসের সুদূরবর্তী স্মৃতিকে একটু পরিস্ফুট করিয়া তুলুন। গভীর বর্ষার প্রখর তেজে, জাহ্নবী উন্মাদিনীর মত সাগরসঙ্গমে ধাবমানা—আশে পাশে গ্রাম নগর কিছুই নাই । চারিদিকে হিংস্ৰ শ্বাপদপূর্ণ ভীষণ জঙ্গল ও নক্ষ কুম্ভীর সর্পাদিপূর্ণ বাদ ও বিলভূমি ! রাত্রে হিংস্রপশুর ভীম-ভৈরব গর্জন। আর পাশ্ববাহিনী ভাগিরথীর স্তরঙ্গরাজির তাণ্ডব নৃত্য। সেই বর্ষাধারী প্লাবিত অপরাহে, চার্ণক ধীরে ধীরে জাহাজ হইতে নামিলেন। তীরে আসিলেন। দেখিলেন,—তাহীদের পূর্ব নিৰ্ম্মিত হাটচালা গুলির চিহ্নমাত্র নাই। বিষন্নমনে—এক নিম্ববৃক্ষতলে বসিয়া, চিন্তান্বিত চিতে নিয়াশাপূর্ণ হৃদয়ে—তাহার ও র্তাহার সঙ্গীদের অবস্থা চিন্তায় বিভোর হইয়া, তিনি পাইপের ধূমপানে আত্মহারা । -