পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায়। లో তখন হুলস্থল ব্যাপার! স্বলেমানের প্রাধাকুলাভ, তাহার উড়িষ্য জয়, উড়িষ্যা-বাণী—হিন্দুরাজগণের অমিত, পরাক্রম ও যুদ্ধ-কৌশল, উড়িষ্যার স্বাধীনতা-রক্ষার জন্ত, তদেশবাসী হিন্দুদের জীবনব্যাপী চেষ্টা, প্রতাপের মনে—একটা নূতন আলোক-জ্যোতি স্থিতি করিল। প্রতাপ যখন শুনিতেন, তাহার পিতৃদেব বিক্রমাদিত্য, যুদ্ধক্ষেত্রে বঙ্গাধিপতি দায়ুদের পার্থে থাকিয়া, অমিত বিক্রমে যুদ্ধ করিতেছেন, অসমসাহসিক বীরত্বের সহিত শত্রুসৈন্ত মথিত করিতেছেন, তাহ শুনিয়া তাহার মনে শক্তিপরিচালন সম্বন্ধে একটা অমুকুল সংস্কার উপস্থিত হইল। আর এই সমস্ত ব্যাপারে প্রতাপের মনে, সেই সময়ে স্বাধীমতার একটা স্পৃহা জাগিয়া উঠে । প্রতাপের দুইজন বাল্যসঙ্গী, এই সময়ে তাহার উন্মেষিত চিত্ত-বৃত্তির পূর্ণ-বিকাশের সহায়তা করিতে প্রস্তুত হইলেন। ইহাদের মধ্যে একজন শঙ্কর চক্রবর্তী ও আর একজন সুর্য্যকান্ত গুহ । প্রতাপের সঙ্গীস্বয়ও, তাহার ন্যায় সাহসী ও বলদপিত ছিলেন । র্তাহারা তিনজনেই গভীর জঙ্গলে শিকার করিতে যাইতেন। কিন্তু র্তাহীদের অগ্রণী ছিলেন—প্রতাপাদিত্য । প্রতাপ গভীর জঙ্গল মধ্যে প্রবেশ করিয়া, যেরূপ ভাবে বরাহ-ব্যাস্ত্ৰাদি শিকার করিতেন, তাহা দেখিয়া তাহারা স্তম্ভিত হইয়া থাকিত ! প্রতাপুের এই উচ্ছ,স্বল জীবন-গতি অন্যদিকে পরিবর্তিত করিবার জন্য, বিক্রমাদিত্য কনিষ্ঠের সহিত পরামর্শ করিয়া, তাহার বিবাহ দিলেন । এই বিবাহ উপলক্ষে, যশোহর-নগরী, নয়ন-মনোহর শোভা ধারণ করিল । এরূপ উৎসব, বহুদিন ধরিয়া কেহ দেখে নাই। বিবাহ হইয়া গেলে, নববধু গৃহে আনিয়া বিক্রমাদিত্য মনে মনে ভাবিলেন, যে ঈশ্বরী-মায়ার আবর্তে পড়িয়া সংসারে সকলেই হাবুডুবু থাইতেছে—প্ৰতাপ নিশ্চয়ই তন্মধ্যে পড়িয়া তাহার উগ্রস্বভাব পরিত্যাগ করিবে । কিন্তু প্রতাপের কোন পরিবর্তনই নাই। প্রতাপ সঙ্গীগণ লইয়া, মৃগয়া ব্যসনে আরও গভীর ভাবে অনুরক্ত হইলেন । প্রতাপ-চরিত্রের বৈচিত্ৰতা বিক্রমাদিত্য কোন রূপেই বুঝিয়া উঠিতে পারিলেন না। প্রতাপাদিত্য-চরিত লেখক বলেন—“তিনি যখন গৃহে থাকিতেন, সে সময়ে তিনি রাজ্যের चीचব্যয় ও শাসন-ব্যবস্থা অতি বিচক্ষণতার সহিত নিৰ্ব্বাহ করিতেন । অপবার যখন কঠোর-ভাব ধারণ করিতেন, সে সময়ে তাহাকে যমের ন্যায় ভীষণ বলিয়া মনে হইত। আবার অন্য সময়ে, তাহার মধুর বাক্য ও সরস ব্যবহার দেখিলে, তাহাতে যে অসুমাত্র কঠোরতা আছে, তাহা বোধ হইত না ।”