পাতা:কলিকাতা সেকালের ও একালের.djvu/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায়। ○ হিজলী-জয়ের পর, প্রতাপ রূপরাম ও রাঘবকে ধরিবার জন্য, সেনাপ্রেরণ করিলেন। রূপরাম—ইতিপূৰ্ব্বেই ভবিষ্যৎ বুঝিতে পারিয়া, রাজকুমারকে সঙ্গে লইয়া দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করিয়াছিলেন । ইহাদের ধরিতে না পারিয়া, প্রতাপ বড়ই মনঃক্ষুন্ন হইলেন । যুদ্ধান্তে হিজলীর হিন্দু রাজ-কৰ্ম্মচারিগণের হস্তে রাজ্যের শাসনভার দিয়া, লুষ্ঠিত দ্রব্য-সম্ভার সহ, তিনি যশোরে প্রত্যাবর্তন করেন । প্রতাপ এই অসম্ভব বিজয়লাভে অধিকতর দপিত হইয়া, মহোল্লাসে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করিলেন । নগরবাসীগণও তোরণাদি নিৰ্ম্মাণ দ্বারা উৎসবাদি করিয়া তাহার যথেষ্ট সম্মান করিলেন । প্রতাপ এই সমরবিজয় উপলক্ষ করিয়া, অনেক ব্রাহ্মণ ভোজন করাইলেন ও সেনাগণকে প্রচুর পরিমাণে পুরস্কার প্রদান করিলেন । নিমবঙ্গে প্রতাপ যেরূপ বৰ্দ্ধিত-প্রতাপ হইয়া, স্বাধীনতা-লাভের জন্য চেষ্টা করিতেছিলেন, তেমনি আর দুইজন শক্তিমান পুরুষ, পূর্ববঙ্গের মধ্যে আপনাদের স্বাতন্ত্রা-প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য, স্বাধীন-রাজ্যের সুচনা করিবার জন্য, প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছিলেন। ইহারা বিক্রমপুরাধিপতি চাদরায় ও কেদাররায় । চাদরায়—কেদাররায় অপেক্ষ অনেক বয়োবৃদ্ধ ছিলেন । কিন্তু তাহার কনিষ্ঠ, কেদাররায় সৰ্ব্ববিষয়ে দক্ষ, সমর-কুশল এবং প্রতাপের অপেক্ষা প্রতিভাবান ছিলেন । যে সকল কলঙ্গ, প্রতাপের জীবনকে কলঙ্কিত করিয়াছিল, কেদাররায়ের সে সব কিছুই ছিলনা। পরে আমরা চাদরায়কেদাররায় প্রসঙ্গে এ বিষয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করিব । - প্রতাপ যখন শুনিলেন—যে বিক্রমপুরাধিপতি চাদরায় ও তাহার কনিষ্ঠ কেদাররায়, পূর্ববঙ্গে এক স্বাধীন রাজ্যের প্রাণ-প্রতিষ্ঠা করিতে উদ্যত হইয়াছেন, তখন তিনি রায়-রাজাদের দমনের নিমিত্ত, এক অভিযান' ব্যবস্থা করিলেন । প্রতাপের ইচ্ছা নয়, যে সমগ্র বঙ্গে আর কেহ তাহার সমকক্ষ হয়। তাহার মনের ইচ্ছা এই—অগ্রণীরূপে তিনি সকলের পুরোবৰ্ত্তী হইয়া, বঙ্গদেশকে মোগলের অধীনতা পাশ হইতে মুক্ত করেন। কাজেই প্রতাপ-এবং তাহার সেনাপতিবর্গ, বিপুলবাহিনী লইয়া বিক্রমপুরাভিমুখে ধাবিত হইলেন। শঙ্কর প্রভৃতি সেনাপতিগণের পরামর্শে, তিনি চারিধার হইতে বিক্রমপুর রাজ্য আক্রমণ করিলেন। কেদাররায় এরূপ অতর্কিত আক্রমণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলেন না। তবুও সাধ্যমত আত্মরক্ষার চেষ্টা করিয়া, যখন তিনি বুঝিলেন—প্ৰতাপের সহিত বৰ্ত্তমান