পাতা:কল্পদ্রুম - দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ.pdf/৭০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৯৪ কল্পদ্রুম | বাজারে অগ্নি লাগিয়া গিয়াছে। তাহাতে “ উপশনির "শুভ দৃষ্টি পড়িয়াছে ! চাকুরি আর প্রায় মিলে না। অনেকে উমেদার অবস্থায় যে কিৰূপ কষ্টে কালযাপন করিয়া থাকেন, তাহা বর্ণনাতীত। নিত্য আদালতে যাওয়া অভ্যাস। চাই। অর্থ থাকুক আর নাই থাকুক, উপবাসীই থাক আর নাই থাক, আদালতে যাইতে হইলে সভ্যতার অনুরোধে ভাল বস্ত্র ও পাছকা আবশ্যক করে। বৎসরাবধি নিত্য গমনাগমনে পাদুক ছিন্ন হইয়া যায়, তথাপিও প্রভুর দয়া হয় না । শেষে হতাশ্বাস হইয়া বিকট দন্ত বাহির করিয়া প্রত্যহ যে কত লোক বসিয়া পড়িতেছেন, তাহার সংখ্যা নাই। ব্যাঙ্ক খুলিয়া স্বাধীন কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলে অনেকের উমেদারীর কষ্ট আর সহ্য করিতে হইবে না । ধনাঢ্য ব্যক্তিরা মনোযোগী হইয়া বহিৰ্ব্বাণিজ্যে প্রবৃত্ত হউন। ভারতে অর্থ নাই তথাপি এখনও এমন দুই এক জন ধনকুবের আছেন, যাহার একাকীই বৈদেশিক বাণিজ্যে রত হইতে পারেন। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যে অতিশয় সাহস আবশ্যক করে । আমাদের ধনিগণের সে সাহস নাই। এজন্য প্রথমতঃ ৩। ৪ জনে একত্র হইয়৷ কাৰ্য্য করিলেই ভাল হয়। আর দেশের ভাবী উন্নতির জন্য কতকগুলি অর্থ সংগ্ৰহ করিয়া কতকগুলি কৃতবিদ্য ব্যক্তিকে শিল্পাদি শিক্ষার জন্য ইংলণ্ড ও অন্যান্য সুসভ্য দেশে প্রেরণ করা কৰ্ত্তব্য । তাহারা সেখান হইতে যন্ত্রাদি নিৰ্ম্মাণ করিতে ও চালা । ইতে শিক্ষা করিয়া দেশে মুস্থ মস্তিষ্কে ফিরিয়া আসিয়া কারখানা খুলিলে ভারতবাসী বহুতর ব্যক্তির অন্নের সংস্থান হইতে পারে। এতদ্ভিন্ন আমাদের অর্থাগমের ও সুখী হইবার অন্য উপায় নাই বলিলে হয়। এস্থলে একটী কথা বলিতে হইল, জমিদার বা ধনিশ্রণীর যে সকলেই hিরুৎসাহ কেবল টাকার সুদ গণনা করিতে ভাল বাসেন, তাহা নহে । অবশ্য দুই এক জনের স্বাধীন কাৰ্য্যে অর্থ বিনিয়োজিত করিতে ইচ্ছা আছে। কিন্তু ইচ্ছা থাকিলে কি হয়, ভারতে যে তেমন পূৰ্ব্বের ন্যায় আর বিশ্বাস নাই। ধৰ্ম্মের বাজারে অগ্নি লাগায় অনেকে অবিশ্বাসী ও প্রতারক হইয়া পড়িয়াছেন ও পড়িতেছেন। পাছে অবিশ্বাসী প্রতারককে সৎ বিবেচনা করিয়া তাহার হস্তে অর্থ দিয়া সমূলে বিনষ্ট হইতে হয়, এই আশঙ্কাতেও অনেকে অর্থ বাহির করেন না। যতদিন লোকে বিশ্বাসী না হয়, বিশ্বাস যে কি অমূ ল্যরত্ন লোকে তাহ জানিতে না পারে ; তত দিন ধনিগণ যে পরের হস্তে বহু অর্থ নিংসঙ্কুচিত চিত্ত্বে দিতে সন্মত হইবেন এমত বোধ হয়