পাতা:কল্পনা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হেনকালে কবি গাহিয়া উঠিল, ‘নরনারী, শুন সবে,
কত কাল ধরে কী যে রহস্য ঘটিছে নিখিল ভবে।
এ কথা কে কবে স্বপনে জানিত, আকাশের চাঁদ চাহি
পাণ্ডুকপোল কুমুদীর চোখে সারা রাত নিদ নাহি!
উদয়-অচলে অরুণ উঠিলে কমল ফুটে যে জলে
এতকাল ধরে তাহার তত্ত্ব ছাপা ছিল কোন্ ছলে।
এত যে মন্ত্র পড়িল ভ্রমর নবমালতীর কানে
বড়ো বড়ো যত পণ্ডিত জনা বুঝিল না তার মানে।’

শুনিয়া তপন অস্তে নামিল শরমে গগন ভরি,
শুনিয়া চন্দ্র থমকি রহিল বনের আড়াল ধরি।
শুনে সরোবরে তখনি পদ্ম নয়ন মুলি ত্বরা—
দখিন-বাতাস বলে গেল তারে, সকলি পড়েছে ধরা।
শুনে ছি-ছি ব’লে শাখা নাড়ি নাড়ি শিহরি উঠিল লতা,
ভাবিল, মুখর এখনি না জানি আরো কী রচাবে কথা।
ভ্রমর কহিল যূথীর সভায়, যে ছিল বোবার মতো
পরের কুৎসা রটাবার বেলা তারো মুখ ফোটে কত।

শুনিয়া তখনি করতালি দিয়ে হেসে উঠ নরনারী—
যে যাহারে চায় ধরিয়া তাহায় দাঁড়াইল সারি সারি।
‘হয়েছে প্রমাণ, হয়েছে প্রমাণ’ হাসিয়া সবাই কহে,
‘যে কথা রটেছে একটি বর্ণ বানানো কাহারো নহে।’
বাহুতে বাহুতে বাঁধিয়া কহিল নয়নে নয়নে চাহি,
‘আকাশে পাতালে মরতে আছি তো গোপন কিছুই নাহি।’

৭৯