পাতা:কাঙাল হরিনাথ - জলধর সেন.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঙ্গাল হয়িনাথ । Σ Ο তাহার সংসারযাত্র নির্বাহের প্রধান অবলম্বন ছিল। গ্রামবাৰ্ত্তার এরূপ আয় হয় নাই, যাহা দ্বারা তিনি সংসারের ব্যয় নিৰ্বাহ করিতে পারেন। সুতরাং অতি কষ্টে সংসারের ব্যয়নিৰ্বাহ হইতে লাগিল। তিন বৎসর এইরূপে অতিবাহিত হইল। চতুর্থবৎসরে চিঠিপত্র লিখিয়া মূল্যাদি আদায় করা ক্রমেই কঠিন হইয়া উঠিল। এই সময়ে তিনি একদিনের দুইদিনের দূরবর্তী স্থানে নিজেই গমন করিয়া মূল্য আদায় করিতে লাগিলেন। তিনি আত্মজীবনচরিতে লিখিয়াছেন—“এই সময় আমিই লেখক, আমিই সম্পাদক, আমিই পত্রিকা-লিপিকারক ও বিলিকারক, এবং আমিই মূল্য। আদায়কারী অর্থ-সংগ্ৰাহক।” আজকালকার সম্পাদক বা সংবাদপত্রের সত্ত্বাধিকারিগণ কাঙ্গাল হরিনাথের এই যত্ন ও চেষ্টার কথা মনে ধারণা করিতে পরিবেন কি না সন্দেহ। এখন উপহারের অনুগ্ৰহে মূল্য অগ্ৰিম আদায় হইতেছে। বাকী আদায়ের ভাবনা তাহদের নাই। এই সময় একদিন মুদ্রাযন্ত্রের অধ্যক্ষ পত্র লিখিলেন যে, “২/৩ দিনের মধ্যে পূৰ্ব্ব-প্রাপ্য, না পাইলে আর গ্রামবাৰ্ত্তা ছাপা করিতে পারিব না।” পত্ৰ পড়িয়া হরিনাথ নিজ জীবনচরিতে লিখিয়াছেন—“পত্রপাঠ করিয়া দীর্ঘনিঃশ্বাসের সহ মস্তক ঘূর্ণিত হইল। ছয়দণ্ড রবি থাকিতে পদব্রজে গমন করিয়া কুষ্টিয়ায় প্ৰাতঃকালে উপস্থিত হইলাম। তথায় যাহা কিছু আদায় হইল, তাহা হস্তগত করিয়া পদ্মা-পারে। চলিলাম। তথায় যাহা আদায় হইল গ্ৰহণ পূৰ্ব্বক ছয়দণ্ড একপ্রহর বেলা থাকিতে প্ৰতিগমন করিয়া রাত্ৰিতে বাড়ী আসিয়া উপস্থিত হইলাম। এই দিন চৈত্রমাসের দুপ্ৰহরের রৌদ্রের সময় পদ্মার তীরস্থ তাপিত বালুকাময়ী চড়া অতিক্রম করিতে পিপাসায় শুষ্ককণ্ঠ ও রৌদ্রতাপে তাপিত হইয়া যে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছিলাম, যদি গ্রামবাৰ্ত্তার প্রতি প্রেমানুরাগ সঞ্চিত না থাকিত, তবে তাহা তৎক্ষণাৎ প্ৰাণত্যাগের কারণ হইত।”