পাতা:কাদম্বরী.djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৬
কাদম্বরী।

করিয়া রহিল। তাহার নয়নযুগল হইতে অজস্র অশ্রুবারি বিনির্গত হইতে লাগিল।

এ দিকে পত্রলেখার মুখে চন্দ্রাপীড়ের আগমনবার্ত্তা শ্রবণ করিয়া কাদম্বরীর আনন্দের আর পরিসীমা রহিল না। প্রাণেশ্বরের সমাগমে এরূপ সমুৎসুক হইলেন যে, তাঁহার আগমন পর্য্যন্ত প্রতীক্ষা করিতে পারিলেন না। প্রিয়তমের প্রত্যুদ্গমন করিবার মানসে উজ্জ্বল বেশ ধারণ করিলেন। মণিময় অলঙ্কারে ভূষিত হইয়া গাত্রে অঙ্গরাগ লেপন পূর্ব্বক কণ্ঠে কুসুমমালা পরিলেন। সুসজ্জিত হইয়া কতিপয় পরিজনের সহিত বাটীর বহির্গত হইলেন। যাইতে যাইতে মদলেখাকে জিজ্ঞাসিলেন, মদলেখে! পত্রলেখার কথা কি সত্য, চন্দ্রাপীড় কি আসিয়াছেন? আমার ত বিশ্বাস হয় না। তাঁহার তৎকালীন নির্দ্দয় আচরণ স্মরণ করিলে তাঁহার আর কোন কথায় শ্রদ্ধা হয় না। আমার হৃদয় কম্পিত হইতেছে। পাছে তাঁহার আগমন বিষয়ে হতাশ হইয়া বিষণ্ণ চিত্তে ফিরিয়া আসিতে হয়। বলিতে বলিতে দক্ষিণ চক্ষু স্পন্দ হইল। ভাবিলেন এ আবার কি! বিধাতা কি এখনও পরিতৃপ্ত হন নাই? আবারও দুঃখে নিক্ষিপ্ত করিবেন? এইরূপ চিন্তা করিতে করিতে মহাশ্বেতার আশ্রমে উপস্থিত হইলেন। দেখিলেন, সকলেই বিষণ্ণ সকলের মুখেই দুঃখের চিহ্ন প্রকাশ পাইতেছে। অনন্তর ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত করিয়া পুষ্পশূন্য উদ্যানের ন্যায়, পল্লবশূন্য তরুর ন্যায়, বারিশূন্য সরোবরের ন্যায়, প্রাণশূন্য চন্দ্রাপীড়ের দেহ পতিত রহিয়াছে, দেখিতে পাইলেন। দেখিবামাত্র মূর্চ্ছাপন্ন হইয়া ভূতলে পড়িলেন, অমনি মদলেখা ধরিল। পত্রলেখা অচেতন হইয়া ভূতলে বিলুণ্ঠিত হইতে লাগিল। কাদম্বরী অনেক ক্ষণের পর চেতন হইয়া সস্পৃহ লোচনে চন্দ্রাপীড়ের মুখচন্দ্র দেখিলেন এবং ছিন্নমূলা লতার ন্যায় ভূতলে পতিত হইয়া শিরে করাঘাত করিতে লাগিলেন।

মদলেখা কাদম্বরীর চরণে পতিত হইয়া আর্ত্তস্বরে কহিল, ভর্ত্তৃ-