পাতা:কাদম্বরী.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮
কাদম্বরী।

কত ভাবনা, কত শঙ্কা ও কল্পনা করিতে লাগিলেন। পরে আসনে উপবিষ্ট হইয়া বসন দ্বারা চক্ষুর জল মুছাইয়া দিয়া মধুর বাক্যে জিজ্ঞাসা করিলেন, প্রিয়ে! কি নিমিত্ত বামকরে বামগণ্ড সংস্থাপন করিয়া বিষণ্ণবদনে ও দীননয়নে রোদন করিতেছ? তোমার দুঃখের কারণ কিছু জানিতে না পারিয়া আমার অন্তঃকরণ অতিশয় ব্যাকুল ও বিষণ্ণ হইতেছে। আমি কি কোন অপরাধ করিয়াছি? অথবা অন্য কেহ প্রজ্বলিত অনলশিখায় হস্তক্ষেপ করিয়া থাকিবেক? যাহা হউক শোকের কারণ বর্ণন করিয়া আমার উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর কর।

রাজা এত অনুনয় করিলেন, বিলাসবতী কিছুই উত্তর দিলেন না—বরং আরও শোকাকুল হইয়া রোদন করিতে লাগিলেন। রাজ্ঞীর তাম্বুলকরঙ্কবাহিনী বদ্ধাঞ্জলি হইয়া নিবেদন করিল, মহারাজ! আপনি কোন অপরাধ করেন নাই এবং রাজমহিষীর নিকটে অন্যে অপরাধ করিবে এ কথাও অসম্ভব। মহিষী যে নিমিত্ত রোদন করিতেছেন তাহা শ্রবণ করুন। সন্তানের মুখাবলোকনরূপ সুখ লাভে বঞ্চিত হইয়া রাণী বহুদিবসাবধি শোকাকুল ছিলেন। কিন্তু মহারাজের মনঃপীড়া হইবে বলিয়া এত দিন দুঃখ প্রকাশ করেন নাই; মনের দুঃখ মনেই গোপন করিয়া রাখিয়াছিলেন। অদ্য চতুর্দ্দশী, মহাদেবের পূজা দিতে মহাকালের মন্দিরে গিয়াছিলেন, তথায় মহাভারত পাঠ হইতেছিল, তাহাতেই শুনিলেন সন্তানবিহীন ব্যক্তিদিগের সদ্গতি হয় না; পুত্ত্র না জন্মিলে পুন্নাম নরক হইতে উদ্ধারের উপায়ান্তর নাই, পুত্ত্রহীন ব্যক্তির ইহলোকে সুখ ও পরলোকে পরিত্রাণ পাইবার সম্ভাবনা নাই; তাহার জীবন, ধন, ঐশ্বর্য্য, সকলই নিষ্ফল। মহাভারতের এই কথা শুনিয়া অবধি রাজ্ঞী অতিশয় উন্মনা ও উৎকণ্ঠিতা হইলেন। বাটী আসিলে সকলে নানাপ্রকার প্রবোধ বাক্যে সান্ত্বনা করিল ও আহার করিতে অনুরোধ করিল; কোন ক্রমেই শান্ত হইলেন না ও আহার করিলেন না। সেই অবধি কাহারও