পাতা:কাদম্বরী.djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাদম্বরী।
১৯

কোন কথার উত্তর দেন না, কাহারও সহিত আলাপ করেন না। কেবল বিষণ্ণবদনে অনবরত রোদন করিতেছেন। এক্ষণে যাহা কর্ত্তব্য করুন।

তাম্বুলকরঙ্কবাহিনীর কথা শুনিয়া রাজা ক্ষণকাল নিস্তব্ধ ও নিরুত্তর হইয়া রহিলেন। পরে দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া কহিলেন, দেবি! দৈবায়ত্ত বিষয়ে শোক ও অনুতাপ করা কোন ক্রমেই বিধেয় নহে। মনুষ্যেরা যত যত্ন ও যত চেষ্টা করুক না কেন, দৈব অনুকূল না হইলে কোন প্রকারে মনোরথ সফল হয় না। পুত্ত্রের আলিঙ্গনে শরীর শীতল হইবে, মুখারবিন্দদর্শনে নেত্র পবিত্র হইবে, অপরিস্ফুট মধুর বচন শ্রবণে কর্ণ জুড়াইবে এমন কি পুণ্য কর্ম্ম করিয়াছি! জন্মান্তরে কত পাপ করিয়া থাকিব, সেই জন্যে এত মনস্তাপ উপস্থিত হইতেছে। দৈব অনুকূল না হইলে কোন অভীষ্টসিদ্ধির সম্ভাবনা নাই। অতএব দৈব কর্ম্মে অত্যন্ত অনুরক্ত হও। মনোযোগপূর্ব্বক গুরুভক্তি, দেবপূজা ও মহর্ষিদিগের পরিচর্য্যা কর। অবিচলিত ও অকৃত্রিম ভক্তিপূর্ব্বক ধর্ম্মকর্ম্মের অনুষ্ঠান কর। পুরাণে শুনিয়াছি, মগধদেশের রাজা বৃহদ্রথ সন্তানলাভের আশয়ে চণ্ডকৌশিকের আরাধনা করেন এবং তাঁহার বরপ্রভাবে জরাসন্ধনামে প্রবলপরাক্রান্ত এক পুত্ত্র প্রাপ্ত হন। রাজা দশরথ মহর্ষি ঋষ্যশৃঙ্গকে প্রসন্ন করিয়া রাম, লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন নামে মহাবলপরাক্রান্ত চারি পুত্ত্র লাভ করেন। ঋষিগণের আরাধনা কখন বিফল হয় না, অবশ্যই তাহার ফল দর্শে, সন্দেহ নাই। দৃঢ়ব্রত ও একান্ত অনুরক্ত হইয়া ভক্তিসহকারে দেব ও দেবর্ষিদিগের অর্চ্চনা কর তাহাতেই মনোরথ সফল হইবেক। হায়! কত দিনে সেই শুভ দিনের উদয় হইবে, যে দিনে স্নেহময় ও প্রীতিময় সন্তানের সুধাময় মুখচন্দ্র অবলোকন করিয়া জীবন ও নয়ন চরিতার্থ করিব; পরিজনেরা আনন্দে পূর্ণপাত্র গ্রহণ করিবে; নগর উৎসবময় হইয়া নৃত্য, গীত, বাদ্যের কোলাহলে পরিপূর্ণ হইবেক, শশিকলা