পাতা:কাদম্বরী.djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
কাদম্বরী।
৫১

কিঞ্চিৎ লজ্জিত হইয়া, সখে! কি হেতু আমাকে অন্যরূপ সম্ভাবনা করিতেছ? আমি ঐ দুর্ব্বিনীত কন্যার অক্ষমালাহরণাপরাধ ক্ষমা করিব না বলিয়া ভ্রূকুটিভঙ্গি দ্বারা অলীক কোপ প্রকাশ পূর্ব্বক আমাকে কহিলেন, চপলে! আমার অক্ষমালা না দিয়া এখান হইতে যাইতে পাইবে না। আমি তাঁহার নিরূপম রূপলাবণ্যের অনুরাগিণী ও ভাবভঙ্গির পক্ষপাতিনী হইয়া এরূপ শূন্যহৃদয় হইয়াছিলাম যে, অক্ষমালা ভ্রমে কণ্ঠ হইতে উন্মোচন করিয়া আমার একাবলীমালা তাঁহার করে প্রদান করিলাম। তিনিও এরূপ অন্যমনস্ক হইয়া আমার মুখপানে চাহিয়াছিলেন যে উহা অক্ষমালা বলিয়াই গ্রহণ করিলেন। মুনিকুমারের সন্নিধানে স্বেদজলে বারংবার স্নান করিয়া পরে সরোবরে স্নান করিতে গেলাম। স্নানানন্তর মুনিকুমারের মনোহারিণী মূর্ত্তি মনে মনে চিন্তা করিতে করিতে বাটী গমন করিলাম।

অন্তঃপুরে প্রবেশিয়া যে দিকে নেত্রপাত করি, পুণ্ডরীকের মুখপুণ্ডরীক ভিন্ন আর কিছুই দেখিতে পাই না। মুনিকুমারের অদর্শনে এরূপ অধীর হইলাম যে, তৎকালে জাগরিত কি নিদ্রিত, একাকিনী কি অনেকের নিকটবর্ত্তিনী ছিলাম, সুখের অবস্থা কি দুঃখের দশা ঘটিয়াছিল, উৎকণ্ঠা কি ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছিলাম, কিছুই বুঝিতে পারি নাই। ফলতঃ কোন জ্ঞান ছিল না। একবারে চৈতন্যশূন্য হইয়াছিলাম। তৎকালে কি কর্ত্তব্য কিছুই স্থির করিতে না পারিয়া, কেহ যেন আমার নিকট না যায়, পরিচারিকাদিগকে এইমাত্র আদেশ দিয়া, প্রাসাদের উপরিভাগে উঠিলাম। যে স্থানে সেই ঋষিকুমারের সহিত সাক্ষাৎ হইয়াছিল সেই প্রদেশকে মহারত্নাধিষ্ঠিত, অমৃতরসাভিষিক্ত, চন্দ্রোদয়ালঙ্কৃত বোধ করিয়া বারংবার দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলাম। দেখিতে দেখিতে এরূপ উন্মত্ত ও ভ্রান্ত হইলাম যে, সেই দিক্ হইতে যে অনিল ও পক্ষী সকল আসিতেছিল তাহাদিগকেও প্রিয়তমের সংবাদ জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা জন্মিল। আমার অন্তঃকরণ তাঁহার