পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্তব

জীব ছাড়া তোমার লীলা সম্ভব হয় না। তুমি নিত্যই এক, আর নিত্যই দুই হইয়া আপনার মধ্যে লীলা কর। তুমি এক হইয়াও লীলারসে বিভোর হইয়া অনন্তরূপ ধরিয়া বিশ্বসংসারে বিচরণ করা। তুমি যখনি তোমার বিশ্ববীণায় ঝঙ্কার দেও তখনি সকল বিশ্বের কবি গান গাহিয়া উঠে। কা’র সে সঙ্গীত, প্রভো! তুমি ছাড়া কেই তাহা সম্ভোগ করে। তুমি পিতা হইয়া, মাতা হইয়া স্নেহদান কর-আবার তুমিই সন্তান হইয়া সে স্নেহের দাবী কর। তুমি প্রভু হইয়া দাসকে স্নেহে আবদ্ধ কর, আবার তুমিই দাস হইয়া প্রভুকে প্রাণের ভক্তি অর্পণ কর। তুমি সখা হইয়া সখ্যারস ঢালিয়া দাও, আবার তুমিই সে রস সম্ভোগ কর। তুমি ধনী হইয়া দান কর, ভিখারী হইয়া গ্রহণ কর। তুমিই নায়কনায়িকা হইয়া প্রেমলীলার অভিনয় করা। তুমিই তাহদের বাহুপাশ হইতে আলিঙ্গন কাড়িয়া লও, তাহদের ওষ্ঠ প্রান্ত হইতে প্রেমচুম্বন চুরি করিয়া আস্বাদ করা।

 সকল ভোগ্যের তুমি ভোক্তা, সকল রসের তুমিই আস্বাদনকারী। আমাদের সকল কর্ম্মের তুমি কর্ত্তা, সকল ধর্ম্মের তুমি ধাতা, সকল বিধির” তুমি বিধাতা। অনন্ত তোমার লীলা, হে অনন্তরূপী নারায়ণ! তোমার কথা যখন ভাবি, অতীতের সমস্ত যবনিকা উত্তোলিত হয়, তখন বুঝিতে পারি ইতিহাস শুধু তোমারই লীলাপরিপূর্ণ পুণ্য কাহিনী। সকল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে জীব আর তুমি, তুমি আর জীব। তুমি এক, তুমিই দুইএই দুই মিলিয়াই তুমি এক। ইহাই বিশ্বের নিগুঢ় রহস্য। ইহাতেই বিশ্বের নিখিল রস-স্ফুর্ত্তি। ধন্য জীব, ধন্য তুমি, ধন্য তোমার লীলা!

নমস্তে নারায়ণ!