পাতা:কাব্যের কথা - চিত্তরঞ্জন দাশ.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাব্যের কথা আমার বাঙ্গলার বড় মধুর রূপ। এ বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডে বিধি এত রূপ কই আর ত’ কাহাকেও দেন নাই। আমার বাঙ্গলার রূপের কি তুলনা আছে! শুঠামচেলাঞ্চলময়ী বনরাজি-বিভূষিতা সরিৎবিপুল উচ্ছাস্যময়ী ভাগীরথী, মারি বুকে অবিরাম নৃত্য করিতেছে, চরণতলে উদ্দাম উচ্ছল মহোৰ্ম্মি-বিস্ফুর্জিত সাগরের দিগন্ত-মুখরিত হলাহল, শিরে নগাধিরাজ ধূর্জট, সূৰ্য্যকিরণে ধক-ধক জ্বলিতেছে। মা আমার এক হাতে ধান্যশীর্ষ অপর হস্তে বরাভয়, কোলে বীণা, পদতলে সহস্রদল শ্বেতপদ্ম ; আকাশ উজ্জ্বল, তরুণীরবি হিরণ-চুর্ণ দিগ্বিদিকে ছড়াইয়া দিতেছে। আশে পাশে ললিতকণ্ঠে পিককুল কলকাঙ্কারে মুখরিত করিতেছে! এ রূপের কি তুলনা আছে! সেই বাঙ্গলা মায়ের বাঙ্গালী ছেলে চণ্ডিদাস, রামপ্রসাদ, মহাপ্ৰভু, রামকৃষ্ণ, সে বাঙ্গালী যে আজিও মরে নাই, তাই সেই আশার আলোয়, সেই আনন্দে, আজ চােখে জল আসে। কি কাঞ্চন-মণি কেলিয়া, কি কাচ আজ কাপড়ের খুটে বাধিয়াছি; রাশি রাশি খড়ির চাপ ও ধূলায় সকল কলঙ্ক শুভ্ৰ করিতেছি ; প্ৰাণের ধৰ্ম্ম ত্যাগ করিয়া কি ভয়াবহ পরাধৰ্ম্মের খোলস পরিয়াছি। বাঙ্গল ভুলিয়া বাঙ্গলার ভাব ভুলিয়া, রূপ ভুলিয়া, প্ৰাণ ভুলিয়া, ধৰ্ম্ম ভুলিয়া সে মায়ের রূপকে দেখিতে পাই না, দেখিলেও আর তিনিতে পারি না । চোখে পর্দা পড়িয়া গেছে, চোখ খারাপ হইয়া গেছে। আজি চোখের সম্মুখে ইউরোপীয় অবভাসের যবনিকা-চোখ আর সে রূপ চিনিতে পারে না । “ইউরোপীয় ভাবের ধারায় ছাচে, নিজেদের না ঢালিয়া, আমরা যেন আজ কিছুই ভাবিতে পারি না । কল্পনা ফেরঙ্গ, ভাব ফেরঙ্গ, সমাজ ও সাহিত্যের অঙ্গে, জীবন ও ধৰ্ম্মের অঙ্গে আজ এই ইউরোপীয় ব্যভিচারী অভাব, আমাদের জীবন ধৰ্ম্ম সাহিত্য শিল্প ও সব কল্পকলাকে মিথ্যা করিয়া ভুলিয়াছে। আজ এই দুর্দিনে সুচীভেদ্য তমসাচ্ছন্ন আকাশতলে এই