পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
কালান্তর

কিন্তু শান্তি দিতে পারে কি? ও অভিভূত করতে পারে, কিন্তু শক্তি দান করতে পারে কি? আজ প্রায় দু হাজার বছর আগে সামান্য একদল জালজীবীর অখ্যাত এক গুরুকে প্রবল রোম-সাম্রাজ্যের একজন শাসনকর্তা চোরের সঙ্গে সমান দণ্ডকাষ্ঠে বিঁধে মেরেছিল। সেদিন সেই শাসনকর্তার ভোজের অন্নে কোনো ব্যঞ্জনের ত্রুটি হয় নি এবং সে আপন রাজপালঙ্কে আরামেই ঘুমতে গিয়েছিল। সেদিন বাইরে থেকে বড়ো দেখিয়েছিল কাকে? আর আজ? সেদিন সেই মশানে বেদনা এবং মৃত্যু এবং ভয়, আর রাজপ্রাসাদের ভোগ এবং সমারোহ। আর আজ? আমরা কার কাছে মাথা নত করব? কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম?

8

 বাংলার মঙ্গলকাব্যগুলির বিষয়টা হচ্ছে, এক দেবতাকে তার সিংহাসন থেকে খেদিয়ে দিয়ে আর-এক দেবতার অভ্যুদয়। সহজেই এই কথা মনে হয় যে, দুই দেবতার মধ্যে যদি কিছু নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকে তা হলে সেটা ধর্মনীতিগত আদর্শেরই তারতম্য নিয়ে। যদি মানুষের ধর্মবুদ্ধিকে নূতন দেবতা পুরাতন দেবতার চেয়ে বেশি তৃপ্তি দিতে পারেন তা হলেই তাকে বরণ করবার সংগত কারণ পাওয়া যায়।

 কিন্তু এখানে দেখি একেবারেই উল্টো। এক কালে পুরুষদেবতা যিনি ছিলেন তাঁর বিশেষ কোনো উপদ্রব ছিল না। খামকা মেয়েদেবতা জোর করে এসে বায়না ধরলেন, ‘আমার পুজো চাই।’ অর্থাৎ ‘যে জায়গায় আমার দখল নেই, সে জায়গা আমি দখল করবই।’ তোমার দলিল কী? গায়ের জোর। কী উপায়ে দখল করবে? যে উপায়েই হোক। তার পরে যে-সকল উপায় দেখা গেল মানুষের সদবুদ্ধিতে তাকে সদুপায় বলে না। কিন্তু পরিণামে এই-সকল উপায়েরই জয় হল। ছলনা অন্যায় এবং নিষ্ঠুরতা কেবল যে মন্দির দখল করল তা নয়, কবিদের দিয়ে মন্দিরা