পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাতায়নিকের পত্র
১৫৩

চলেছে জগৎ জুড়ে, নানা জায়গায় নানা পথে কাটাকাটি। কাজেই কলে কলে যদি একবার সংঘাত বাধল, যদি পরস্পরকে বাঁচিয়ে চলতে না পারল, তা হলে সেই দুর্যোগে ভাঙচুরের পরিমাণ অতি ভয়ানক হয়ে ওঠে এবং পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্ত পর্যন্ত থরথর করে কাঁপতে থাকে।

 এই কলের গাড়ির সংঘাত এবারে খুব প্রবল ধাক্কায় ঘটেছে; কি মাল কি সওয়ারি নাস্তানাবুদ হয়ে গেল। তাই চারি দিকে প্রশ্ন উঠেছে, এ কী হল, কেমন করে হল, কী করলে ভবিষ্যতে এমন আর না হতে পারে? মানুষের ইতিহাসে এই প্রশ্ন এবং বিচার যখন উঠে পড়েছে তখন আমাদেরও কি ভাবতে হবে না? তখন, শুধুই কি পরের নামে নালিশ করব? নিজের দায়িত্বের কথা স্মরণ করব না?

 আমি পূর্বেও আভাস দিয়েছি, এখনো বলছি, দুর্বলের দায়িত্ব বড়ো ভয়ানক। বাতাসে যেখানে যা-কিছু ব্যাধির বীজ ভাসছে দুর্বল তাকেই আতিথ্য দান করে তাকে নিজের জীবন দিয়ে জিইয়ে রাখে। ভীরু কেবল ভয়ের কারণকে বাড়িয়ে চলে, অবনত কেবল অপমানকে সৃষ্টি করে। চোখে যেখানে আমরা দেখতে পাই নে সেখানে আমাদের ব্যথা পৌছয়; মাটির উপর যে-সব পোকামাকড় আছে তাদের আমরা অবাধে মাড়িয়ে চলি, কিন্তু যদি সামনে একটা পাখি এসে পড়ে তার উপরে পা ফেলতে সহজে পারি নে। পাখির সম্বন্ধে যে বিচার করি পিপড়ের সম্বন্ধে সে বিচার করি নে।

 অতএব মানুষের প্রধান কর্তব্য, তাকে এমনটি হতে হবে যাতে তাকে মানুষ বলে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। এ কর্তব্য কেবল তার নিজের সুবিধের জন্যে নয়, পরের দায়িত্বের জন্যেও। মানুষ মানুষকে মাড়িয়ে যাবে এটা, যে লোক মাড়ায় এবং যাকে মাড়ানো হয় কারো পক্ষে