পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সত্যের আহ্বান
১৯৯

বা ইকনমিক যোগ পূর্ণ যোগ নয়, সর্বশক্তির যোগ চাই। অন্য দেশের ইতিহাস যখন লক্ষ্য করে দেখি তখন পোলিটিক্যাল ঘোড়াটাকে সকলের আগে দেখি, মনে মনে ঠিক করি ঐ চতুষ্পদটারই টানে সমস্ত জাত এগিয়ে চলেছে। তখন হিসাব করে দেখি নে— এর পিছনে দেশ বলে যে গাড়িটা আছে সেটা চলবার যোগ্য গাড়ি, তার এক চাকার সঙ্গে আর-এক চাকার সামঞ্জস্য আছে, তার এক অংশের সঙ্গে আর-এক অংশের ভালোরকম জোড় মেলানো আছে। এই গাড়িটি তৈরি করে তুলতে শুধু আগুন এবং হাতুড়ি-করাত এবং কলকজা লেগেছে তা নয়— এর মধ্যে অনেক দিনের অনেক লোকের অনেক চিন্তা, অনেক সাধনা, অনেক ত্যাগ আছে। আরো এমন দেশ আমরা দেখেছি— সে বাহ্যত স্বাধীন কিন্তু পোলিটিক্যাল বাহনটি যখন তাকে টানতে থাকে তখন তার ঝড়্‌ ঝড়্‌ খড়্‌ খড়্‌ শব্দে পাড়ার ঘুম ছুটে যায়, ঝকানির চোটে সওয়ারির বুকে পিঠে খিল ধরতে থাকে, পথ চলতে চলতে দশবার করে সে ভেঙে ভেঙে পড়ে, দড়িদড়া দিয়ে তাকে বাঁধতে বাঁধতে দিন কাবার হয়ে যায়। তবু ভালো হোক আর মন্দ হোক, স্কু আলগা হোক আর চাকা বাঁকা হোক, এ গাড়িও গাড়ি। কিন্তু যে জিনিসটা ঘরে বাইরে সাত টুকরো হয়ে আছে, যার মধ্যে সমগ্রতা কেবল যে নেই তা নয়, যা বিরুদ্ধতায় ভরা, তাকে উপস্থিতমত ক্রোধ হোক বা লোভ তোক কোনো-একটা প্রবৃত্তির বাহ বন্ধনে বেঁধে হেঁই হেই শব্দে টান দিলে কিছুক্ষণের জন্যে তাকে নড়ানো যায়, কিন্তু একে কি দেশদেবতার রথযাত্রা বলে? এই প্রবৃত্তির বন্ধন এবং টান কি টেকসই জিনিস? অতএব ঘোড়াটাকে আস্তাবলে রেখে আপাতত এই গড়াপেটার কাজটাই কি সব চেয়ে দরকার নয়? যমের ফাঁসি-বিভাগের সিংহদ্বার থেকে বাংলাদেশের যে-সব যুবক ঘরে ফিরে এসেছেন তাদের লেখা পড়ে, কথা শুনে আমার মনে হয় তাঁরা এই কথাই ভাবছেন। তাঁরা বলছেন, সকলের আগে আমাদের যোগসাধন