পাতা:কালান্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৮).pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
কালান্তর

আপত্তির আভাসমাত্র প্রকাশ পেয়েছিল; সম্পাদক বলেন, তার পরদিনই পাঠক-মণ্ডলীর চাঞ্চল্য তাকে চঞ্চল করে তুললে। যে আগুনে কাপড় পুড়েছে সেই আগুনে তার কাগজ পুড়তে কতক্ষণ? দেখতে পাচ্ছি, এক পক্ষের লোক অত্যন্ত ব্যস্ত, আর-এক পক্ষের লোেক অত্যন্ত ত্রস্ত। কথা উঠেছে সমস্ত দেশের বুদ্ধিকে চাপা দিতে হবে, বিদ্যাকেও। কেবল বাধ্যতাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। কার কাছে বাধ্যতা? মন্ত্রের কাছে, অন্ধবিশ্বাসের কাছে।

 কেন বাধ্যতা? আবার সেই রিপুর কথা এসে পড়ে, সেই লোভ। অতি সত্বর অতিদুর্লভ ধন অতি সস্তায় পাবার একটা আশ্বাস দেশের সামনে জাগছে। এ যেন সন্ন্যাসীর মন্ত্রশক্তিতে সোনা ফলাবার আশ্বাস। এই আশ্বাসের প্রলোভনে মানুষ নিজের বিচারবুদ্ধি অনায়াসে জলাঞ্জলি দিতে পারে এবং অন্য যারা জলাঞ্জলি দিতে রাজি হয় না তাদের 'পরে বিষম ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। বাহিরের স্বাতন্ত্রের নামে মানুষের অন্তরের স্বাতন্ত্রকে এইরকমে বিলুপ্ত করা সহজ হয়। সকলের চেয়ে আক্ষেপের বিষয় এই যে, সকলেই যে এই আশ্বাসে সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তা নয় কিন্তু তারা বলে, এই প্রলোভনে দেশের এক দল লোককে দিয়ে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ‘সত্যমেব জয়তে নানৃতম্‌’ এটা যে ভারতের কথা সে ভারত এঁদের মতে স্বরাজ পেতেই পারে না। আরো মুশকিল এই যে, যে লাভের দাবি করা হচ্ছে। তার একটা নাম দেওয়া হয়েছে কিন্তু সংজ্ঞা দেওয়া হয় নি। ভয়ের কারণটা অস্পষ্ট হলে সে যেমন অতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে, লোভের বিষয়টা অস্পষ্ট হলে তারও প্রবলতা বেড়ে যায়— কেননা তার মধ্যে কল্পনার কোনো বাধা থাকে না এবং প্রত্যেক লোকেই তাকে সম্পূর্ণ নিজের মনের মতো করে গড়ে নিতে পারে। জিজ্ঞাসা-দ্বারা তাকে চেপে ধরতে গেলে সে এক আড়াল থেকে আর-এক আড়ালে অতি সহজেই